02 July 2021

লকডাউনে কেমন আছে শহর ও গ্রামের মানুষ?

করোনার সংক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়ার এখন পর্যন্ত প্রধান উপাদান হলো টিকা। কিন্তু এ টিকা নিয়ে যে বাংলাদেশ বড় সংকটে আছে, তা সরকারের নীতিনির্ধারকেরাও স্বীকার করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন তো একবার ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, সবাই আশ্বাস দেয়, টিকা দেয় না। উন্নত দেশগুলোর কথা বাদ দিলাম, কিউবার মতো ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশও যখন টিকা উৎপাদন করল, তখন আমরা সময়মতো উদ্যোগ নিলাম না কেন? এখন থেকে টিকা উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু করলেও অনেক সময় লাগবে।


সরকারের মন্ত্রীরাও বলছেন, লকডাউন স্থায়ী সমাধান নয়। মাসের পর মাস সবকিছু বন্ধ থাকলে অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে। জীবন কিংবা জীবিকার মধ্যে সমন্বয় দূরের কথা, অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। এ করোনার মধ্যেই আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। মাস্ক পরতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। টিকা নিতে হবে। করোনার প্রথম ঢেউ ছিল প্রধানত শহরকেন্দ্রিক। অনেকে করোনা থেকে রক্ষা পেতে গ্রামে চলে গিয়েছিলেন। এবার শহর ও গ্রাম উভয় অঞ্চলে সমানভাবে সংক্রমিত। তাই মানুষকেও বুঝতে হবে, গ্রামে গেলেও ঝুঁকি কমবে না। 

গ্রামে যারা কৃষির ওপর নির্ভরশীল, তাদের হয়তো খাওয়া-পরার চিন্তা কম। কিন্তু জেলে, কামার, কুমার, তাঁতি সম্প্রদায়ের মানুষ নিরুপায়। আর শহরেও সব মানুষই তো মাস শেষে বেতন পান না। সব মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্যও নেই যে এক-দুই সপ্তাহ ঘরে বন্দী থাকলেও তাঁরা চলতে পারবেন। দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলো কীভাবে চলবেন? যাঁরা ফুটপাতে ছোট্ট দোকান সাজিয়ে বসতেন, যাঁরা রাস্তার মোড়ে কাজের জন্য সকালে টুকরি-হাতুড়ি, বাটালি নিয়ে অপেক্ষা করতেন, অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন, তাঁরা কোথায় যাবেন? কী খাবেন?

সরকার লকডাউনের মধ্যে কলকারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু মালিকেরা শ্রমিকদের আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা করেননি। এই যে গণপরিবহনের লাখ লাখ চালক-কর্মী দীর্ঘদিন অলস বসে থাকার পর গত ঈদের পর যানবাহন নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন, তাঁরাও ফের বেকার হয়ে পড়লেন। একদিন গাড়ি বের না হলে মালিক মজুরি দেবেন না। একই কথা প্রযোজ্য নৌযানশ্রমিকদের বেলায়। করোনায় বেশির ভাগ খাবার দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। অনানুষ্ঠানিক খাতেও লাখ লাখ শ্রমিক আছেন, যাঁরা মাস শেষে সামান্য মজুরির কটা টাকা পেতেন, তা-ও লকডাউনে বন্ধ।

কেবল এই শ্রমিকেরা নন, করোনা লকডাউনে বড় বিপদে পড়েছেন নন-এমপিও শিক্ষকেরাও। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই ধরনের শিক্ষক আছেন। যাঁরা ভাগ্যবান, তাঁরা সরকারি ভাতা পান, যা মূল বেতনের শতভাগ। কিন্তু যাঁরা এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নন-এমপিও শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া ফির ওপরই তাঁরা নির্ভর করেন। অনেক আগেই তাঁদের বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। করোনা মানুষের জীবনকে কঠিন করে তুলেছে। লকডাউনে সেই কঠিন জীবন হয়েছে আরও কঠিনতর।