19 January 2016

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বৃত্তান্ত

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্ম তারিখ নিয়ে আমাদের বিরাট উদ্দীপনা আছে। এই তারিখে বিরাট বিরাট মিলাদ হয়, মিটিং হয় সেই ছবি পেপার পত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হয়, এদের কে একটু জিজ্ঞাস করবেন কত সনে জিয়ার জন্ম বা জিয়ার বাবার নাম কি অথবা মায়ের নাম কি দেখবেন সবাই এদিক ওদিক চাওয়া চাওয়ি করছে। কেউ কেউ আবার মুখ খিচিয়ে বলে উঠবেন এত জানার দরকার কি?




অনেক কিছু জানার আছে যে মানুষ টার আদর্শ আপনি অন্যকে শিক্ষা দেবেন, তাকে পুজি করে রাজনীতি নামক ব্যাবসা করে কেষ্ট বিষ্টু হলেন তাকে তো আপনার একটু জানতেই হবে। ওই জিয়া নাম ছাড়া কিন্তু রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে আপনি এমন কিছু করেন নাই (সবাইকে বলছি না তবে অধিকাংশ) যে আপনাকে আম জনতা সালাম দেবে। তাই যাকে পুজি করে নাম, ধাম, অর্থ কামাচ্ছেন তাকে আপনার একটু জানা উচিত বৈকি।

জিয়াউর রহমানের পিতা মোহাম্মদ মুনসুর রহমান ব্রিটিশ আমলের একজন খ্যাতিমান কেমিষ্ট ছিলেন। তিনি রাজশাহী সরকারী কলেজ থেকে কেমিষ্ট্রি, ফিযিক্স এবং ম্যাথমেটিক্স নিয়ে ১৯২৬ সালে বি এস সি ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯২৮ সালে অবিভক্ত ভারতের আলীপুর কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত আলীপুর টেষ্টিং ল্যাবে কেমিষ্ট হিসাবে যোগদান করেন। ১৯৩০ সালে অটোয়ারির মির্জা পরিবারের জাহানারা খাতুনের সাথে জনাব মনসুরের বিয়ে হয়। জাহানারা খাতুন এবং মনসুর রহমান দম্পতির পাচটি পুত্র সন্তান কিন্তু কোন মেয়ে ছিল না। জিয়াউর রহমান কমল নামে তাদের দ্বিতীয় পুত্র জন্মগ্রহন করে ১৯৩৬ সালের ১৯ শে জানুয়ারী। জন্মস্থান: বগুড়া।

মনসুর রহমান সাহেব তার পাচ ছেলেকেই যথার্থ উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে। বড় ছেলে রেজাউর রহমান আই এস সি পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়ে নৌবাহিনীতে ক্যাডেট হিসাবে যোগ দান করে। কিছু দিন নৌবাহিনীতে কর্মরত থাকার পর চাকুরী ছেড়ে ইংল্যান্ডে ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে গ্রাজুয়াশান লাভ করে সেখানে সেটেলড হন পরে স্ব যোগ্যতায় জাতিসংগে আন্তর্জাতিক সার্ভিস থেকে অবসর গ্রহন করে। দ্বিতীয় ছেলে জিয়াউর রহমান। এর ব্যাপারে এখানে কোন আলোচনা করব না। জিয়ার বাকী ভাইদের সামান্য পরিচয় দিয়ে আমরা জিয়ার শৈশব কৈশরে আলোকপাত করব। তৃতীয় ছেলে মিজানুর রহমান অর্থনীতিতে মাষ্টার্স ডিগ্রী লাভ করে আরব বাংলাদেশ ব্যাংকের লন্ডন শাখায় কর্মরত থাকা অবস্থায় ১৯৯৮ সালে মৃত্যু বরন করেন। চতুর্থ ছেলে খলিলুর রহমান ফার্মেসীতে গ্রাজুয়াশান লাভ করার পর মোজাম্বিক সরকারের অধীনে চাকুরী লাভ করে পরে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী ভাবে বসবাস করে। সব থেকে ছোট ছেলে আহমেদ কামাল গ্রাজুয়েশান কমপ্লিট করে কর্মজীবনে যোগ দান করে। এক সময় পর্যটন কর্পোরেশানের জি এম হিসাবে কর্মরত ছিলেন। একজন অকৃতদার মানুষ হিসাবে আহমেদ কামাল এখন ঢাকা শহরে বসবাস করছেন।

জিয়াউর রহমানের পিতামহ কামাল উদ্দীন আহমদ একজন খ্যাতনামা সমাজ সংস্কারক ছিলেন। তিনি ছিলেন সে সময়ের ডিগ্রী পাশ ছিলেন তার এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের জন্য তিনি এখনো স্থানীয়দের কাছে শ্রদ্ধেয়। তার নিজস্ব গ্রামে মহিষাবানে তার প্রতিষ্ঠিত স্কুল এখন হাইস্কুলে উন্নীত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় স্থানীয় কৃষকদের পাট চাষে উদ্ভুদ্ধ করে আদর্শ ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হিসাবে তিনি স্বর্ন পদক প্রাপ্ত হন। অভিজাত, জ্ঞান পিপাষু, বিচক্ষন দাদা কামাল উদ্দীনের ব্যাক্তিত্ব ছোট কমল কে ভীষনভাবে প্রভাবিত করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ফেরত চাচা ডাঃ ক্যাপ্টেন মমতাজুর রহমানের প্রতি কমলের ছিল সীমাহীন কৌতুহল। চাচার যুদ্ধাভিযান গুলো চোখ বড় বড় করে শিশু কমল শুনে যেত আর ভাবত আমিও পারব এ রকম হতে? শিশু কমলের এক মামা বাচ্চু মামা (মেজর ডাঃ মাইনুল ইসলাম) কে নিয়েও ছিল এক অন্তহীন কৌতুহল। এই বাচ্চু মামা ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন। যুদ্ধে আপন জন হারানোর বেদনা মর্মে মর্মে উপলদ্ধি করতেন পরিনত বয়সের জিয়াউর রহমানের তাইতো মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ছিল তার সীমাহীন পক্ষপাতিত্ব। রাষ্ট্রপতি হবার পরও প্রায় রাতেই একা একা চলে যেতেন মোহাম্মদপুর মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় স্থলে। সে গল্প অন্য কোন দিন আবার করব।