25 April 2020

বাংলাদেশে করোনা সনাক্তকরণ ব্যবস্থার অব্যবস্থা

করোনা সম্পূর্ণ নতুন একটি ভাইরাস। এটিকে মোকাবিলা করতে হলে হাসপাতালে যেমন ডাক্তার, নার্সদের দরকার, তেমনি ভাইরাসটি কেমন, কিভাবে আমাদের দেহে ঢুকে আমাদের অসুস্থ করে ফেলে, এটিকে কিভাবে ডায়গনোসিস করা যেতে পারে, কিভাবে এটির ভ্যাক্সিন তৈরী করা যেতে পারে, ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা কতটুকু এই কাজগুলোর জন্য ইমিউনোলজি, মলিকিউলার বায়োলজি, ভাইরোলজি, ডিজিজ মডেলিং এক্সপার্ট, ভ্যাক্সিন সাইন্টিষ্টদের দরকার।

ডাক্তারদের মধ্যে অনেকে ভাইরোলজিষ্ট আছেন, বাস্তবিক অর্থে তারা মেডিক্যাল ভাইরোলজিষ্ট। মেডিক্যাল ভাইরোলজি আর হার্ডকোর ল্যাবরেটরী ভাইরোলজি এক জিনিষ না। করোনা ভাইরাসের প্রকৃতি বোঝার জন্য দরকার হার্ডকোর ল্যাবরেটরী ভাইরোলজিষ্ট, করোনা কিভাবে আমাদের ফুসফুস সহ অন্যান্য টিস্যুর ক্ষতিসাধন করে, তা বোঝার জন্য দরকার ইমিউনোলজিষ্ট, মলিকিউলার বায়োলজিষ্ট ডায়াগনোসিসে সাহায্য করতে পারেন, ভ্যাক্সিন সাইন্টিষ্ট ভ্যাক্সিন তৈরী করবেন এবং এর কার্যকারিতা দেখবেন। এভাবে সবাইকে নিয়ে একটি সম্বন্বিত পরিকল্পনা তৈরী করা দরকার।

কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। চীন, ইটালী, স্পেনে কি হইছে, এটা আমরা দেখছি। প্রস্তুতি নেয়ার মত যথেষ্ট সময় আমাদের হাতে ছিল। তখন থেকেই ডাক্তারদের PPE সংগ্রহ করে রাখা দরকার ছিল, Ventilator-গুলা কাজ করছে কিনা দেখে রাখা দরকার ছিল। ডায়গনোসিসের জন্য RT-PCR টেকনোলজী ব্যবহার করতে হবে, তাও জানা ছিল। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে ল্যাবে আগে থেকেই RT-PCR মেশিন আছে, প্রশিক্ষিত জনবল আছে, তাদের তৈরী রাখা দরকার ছিল। এসবের কিছুই হয় নি। দুদিন পর পর সংবাদ সম্মেলন করা ছাড়া IEDCR এসবের কিছু করে নাই।

গত ১৮ই এপ্রিলে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ১৭ সদস্যের একটি জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়, যার সবাই ডাক্তার। সেখানে কোন ল্যাবরেটরী ভাইরোলজিষ্ট, ইমিউনোলজিষ্ট, মলিকিউলার বায়োলজিষ্ট, ডিজিজ মডেলিং এক্সপার্ট ও ভ্যাক্সিন সাইন্টিষ্ট নাই। শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দোষ দিয়ে লাভ কি? ডাক্তারদের ভাইরোলজি, মলিকিউলার বায়োলজি জ্ঞান যে নাই, সেটা ডাক্তাররা নিজেরাও ভাল করেই জানে। স্বাস্থ্য সচিবকে ডাক্তাররা নিজেরা কোনদিন বলেছে, করোনা মোকাবিলায় ভাইরোলজিষ্ট, ইমিউনোলজিষ্ট, মলিকিউলার বায়োলজিষ্ট, ডিজিজ মডেলিং এক্সপার্টদেরও দরকার?

ঢাবি থেকে একটি এক্সপার্ট প্যানেল তৈরী করে স্বাস্থ্য সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছিল। প্রস্তাবনা স্বাস্থ্য সচিবের কাছে পৌছানোর আগেই ডাক্তাররা আটকে দেয়। বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে ডাক্তাররা মেডিক্যাল সাইন্সকে নিজেদের সম্পত্তি মনে করে। নন-মেডিক্যাল কারোর সেখানে কথা বলার অধিকার সেখানে নেই। অথচ এই ডাক্তারগুলাই যখন বিদেশে ট্রেনিংয়ে যায়, তারা দেখে, সেখানে ডাক্তার, রিসার্চার সবাই একসাথে কাজ করছে। দেশে ফিরে তারা সব ভুলে যায়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ডাক্তারদের বলছি, এই জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় দয়া করে এক্সপার্টদের সঙ্গে নিন। এটা মাতবরী করার সময় না।