28 August 2019

রোহিঙ্গা সংকটঃ গলার কাঁটা হয়েই থাকবে বাংলাদেশের জন্য


আমি ঠিক জানিনা আসলে এ সমস্যার সমাধান ঠিক কিভাবে হবে? এটার জন্য বেশ কতোগুলি আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট যেমন দায়ী তেমন দায়ী আমাদের বৈদেশিক নীতির চরম ব্যর্থতা। বার্মিজরা কিরকম জাতিবিদ্বেষী সেটা নতুন করে বলার কিছু নেই। তেমনি নতুন করে বলার কিছু নেই কেন মিয়ানমার তাদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দিল। এই সংকটের সময় আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র বলে পরিচিত আশেপাশের কোনও দেশই আমাদের পক্ষে কাজ করছে না আজ। কিন্তু কেন এই অবস্থা হল? এর জন্য যেটা তাৎপর্যপূর্ণভাবে দায়ী সেটা হল আওয়ামী সরকারের অতিমাত্রায় ভারত নির্ভরতা। কেবলমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সরকার ভারতকে মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়েছে।

আমাদের বন্ধুদেশ বলে পরিচিত চীন, জাপান, রাশিয়ার সাথে যদি শুরু থেকে ভালো সম্পর্ক রাখা যেত এবং দেশে তাদের বেশ ভালো রকমের বিনিয়োগ করতে দেয়া যেত তাহলে এই সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে আজ তাদের কেউ এরকমভাবে মিয়ানমারের পাশে থাকতো না। যদিও এটাও একটা বড় ফ্যাক্ট যে মিয়ানমার সম্পদশালী দেশ, তাদের ওখানে বিনিয়োগ করলে লাভবান হওয়া যাবে, কিন্তু তার সাথে তার পাশাপাশি এটাও সত্য যে বার্মিজরা চীন, জাপান, রাশিয়া ত বটেই এমনকি ভারতের মতো দেশকেও তাদের দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভীষণ গুরুত্ব দিয়েছে যেটা আমরা সেভাবে দিতে পারিনি। তাছাড়া কূটনৈতিকভাবেও এদের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বেশ ভালো রকমের জোরালো রেখেছে বার্মিজরা যেটা আমরা রাখতে পারিনি।

শুধুমাত্র ভারতের সাথে ছাড়া অন্যান্য দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক এখনো ততোটা ভালো নয়। এর জন্য সরকারী নীতিই সব থেকে দায়ী। অথচ ভারতের রয়েছে অনেক স্বার্থ মিয়ানমারকে নিয়ে। একারণে এই সংকট নিরসনে তারা উল্লেখযোগ্য কোনও ভূমিকাই রাখবে না। সোনাদিয়ায় বন্দর করতে এবং বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল চীন। সেটা সরকার আর দেয়নি। দিলে সেটা রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করতে পারতো। কারণ চীন চেয়েছে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশের পথ। যেটা সোনাদিয়ায় তারা করতে চেয়েছিল সেটা বাংলাদেশ না দিলেও আরাকানের সিত্বেতে মিয়ানমার চীনকে সেটা করতে দিয়েছে। ফলাফল “সব রোহিঙ্গা ওখান থেকে ভাগাও আর ওখানে বিনিয়োগ করো” – এই নীতি চূড়ান্ত অমানবিকভাবে কার্যকর করলো জাতিবিদ্বেষী বার্মিজরা। এখন তারা ওখানে চীন, জাপান এমনকি ভারতকেও বিনিয়োগ করতে দিচ্ছে। যেটা বাংলাদেশ সেভাবে দিতে পারেনি।

এদিকে আবার রাশিয়ার কাছ থেকে নিয়মিতই অস্ত্র কিনছে বার্মিজরা। লাভ হচ্ছে রাশিয়ার। চীন ও জাপানের মতো দেশকে ওখানে বিনিয়োগ করতে দেয়ায় লাভ হচ্ছে তাদেরও। এখন ভারতও সেই লাভের গুড়ে ভাগ বসাতে উদগ্রীব। সোজা কথায় মিয়ানমারকে ঘিরে ঐসব দেশগুলোর যে অর্থনৈতিক স্বার্থ সেটা বাংলাদেশের চেয়ে বেশী। সুতরাং তারা এই সংকটের সময় বার্মিজদের পাশেই আছে। লিভারেজ বলে একটা ব্যাপার আছে কূটনীতিতে। সেটা আমাদের বাংলাদেশের চেয়ে বার্মিজরা ভালো বোঝে। কতটা ব্যর্থ আমাদের বৈদেশিক নীতি সেটা আবারো করুণভাবে ফুটে উঠলো এই রোহিঙ্গা সংকটের সময়। এই সংকট কূটনৈতিকভাবে অতিমাত্রায় ভারত নির্ভরতার অন্যতম ফলাফল। রোহিঙ্গা সংকট গলার কাঁটা হয়েই থাকবে বাংলাদেশের জন্য। গিলতেও পারবে না , উগরাতেও পারবে না।