ভারতের আসাম রাজ্যের নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি (ন্যাশনাল রেজিষ্টার অব সিটিজেন্স) নিয়ে ভারত সরকার আরেকধাপ এগিয়ে গিয়েছে। অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হয়েছে কিছুদিন আগে। সেখানে প্রায় ১৯ লাখ লোক বাদ পড়েছে চূড়ান্ত তালিকা থেকে। অর্থাৎ তাঁরা আর ভারতীয় নাগরিক নয়। ভারত সরকার বা আসাম রাজ্য সরকারের ভাষায় তাঁরা বিদেশী। নাগরিকপঞ্জির বিষয়টা ভারতের একান্ত নিজস্ব। এটা তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। ভারত সরকার বারবার সে কথাই বলেছে। কিন্তু তাতে বাংলাদেশের ভয় না পাওয়ার কোন কারণ নেই। ভয়টা বরং বেশি বাংলাদেশের। কারণ, এই তথাকথিত বিদেশী বিভিন্ন ব্যক্তি বা গোষ্টী কিন্তু বারবার বাংলাদেশের দিকেই আঙুল তুলেছে। সরাসরি বলা হয়েছে এরা বাংলাদেশ থেকেই আসামে অবৈধভাবে গিয়েছে। এখন যদি এদেরকে বাংলাদেশি বলে আমাদের এদেশে ফেরত পাঠানো হয় তাহলে বাংলাদেশের ভয় পাওয়ার কারণ নয় কি?
এই ১৯ লাখের সবাইকে হয়তো বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবেনা কারণ এরমধ্যে অনেক হিন্দুও রয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঝড়টা যাবে মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর দিয়েই। অনুপাতটা যদি ৫০ শতাংশও হয় তাহলে প্রায় ১০ লাখ মানুষকে ঠেলে পাঠানো হবে বাংলাদেশে। হিন্দু জনগোষ্ঠীর ভয়ের কারণ খুব কমই থাকবে। কারণ লোকসভায় এই বছরের জানুয়ারিতে নাগরিকত্ব সংশোধনী (সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল পাস হয়েছে। এটা এখন রাজ্যসভায় অনুমোদনের জন্য অপেক্ষমান। পাস হয়ে গেলেই হিন্দুদের জন্য কেল্লাফতে অবস্থা হয়ে যাবে। তখন অন্যান্য দেশ থেকে ভারতে যাওয়া হিন্দুরা নাগরিকত্ব পেয়ে যাবে। যদিও এনআরসির ভাষ্যমতে বঞ্চিতরা পর্যায়ক্রমে ফরেনার্স ট্রাইবুনাল, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সুযোগ পাবে। কিন্তু সেখানে ক’জনই বা ঠিকবে? কিন্তু বাকিদের অবস্থা কি হবে নাগরিকত্ব প্রমান না করতে পারলে? তাদেরকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মত বের করে দেওয়া হবে না তো?
রোহিঙ্গা ইস্যুর সাথে আসামের বর্তমান ইস্যুর অনেক মিল। রোহিঙ্গাদেরও নাগরিকত্ব বঞ্চিত করা হয়েছিলো মিয়ানমারে অনেক বছর আগে। পরে বাঙালী উপাধি দিয়ে তাদের উপর চলেছে অমানবিক নির্যাতন। যার ফলে কয়েক দশক ধরে রোহিঙ্গারা পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। বর্তমানে ১০ লাখের উপর রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। আসামের বাঙ্গালীদেরও নিশ্চয় একই অবস্থা হবে এক সময়। রাষ্ট্রহীন হয়ে একসময় তাঁরা নির্যাতিত হবে। তারপর পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিবে রোহিঙ্গাদের মতো। সুতরাং ভয়ের কারণ আছে বাংলাদেশের জন্য। আপাত দৃষ্টিতে যেটাকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলা হচ্ছে তা সবসময় অভ্যন্তরীণ থাকবে না। এর ফল ভোগ করতে হবে আমাদের। এই ছোট দেশে আশ্রয় দিতে হবে আরও দশ লাখের মতো মানুষকে।
কিন্তু, আরেকটা রোহিঙ্গা পরিস্থিতির জন্য কি বাংলাদেশ প্রস্তুত? চিন্তভাবনা করতে হবে এখনই। প্রতিবাদ জানাতে হবে এতো মানুষকে রাষ্ট্রহীন করার প্রক্রিয়ার। জনমত গড়ে তুলতে হবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে।