01 August 2022

গরিব একটা দেশের মানুষের সাথে এ কেমন রসিকতা!

ঠিক যখন সরকার মহোদয় বলছেন মিতব্যয়ী হতে তখন পত্রিকায় খবর বের হচ্ছে, কিছু সরকারি কর্মকর্তাদের গাছে পানি দেয়া শিখানোর জন্য নেদারল্যান্ড পাঠানো হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞার পরও কিভাবে ওনারা সরকারি খরচে বিদেশ যান তা চিন্তা করতেই আপনাকে হতাশায় ডুবে যেতে হবে। দেশে জ্বালানি সংকটের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিনের পর দিন। ভেপসা গরমের সাথে অবিরাম লোড শেডিং এর জন্য দোহাই দেয়া হচ্ছে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধকে।


বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফান্ড ৪৭,০০০ কোটি ডলার আছে বললেও আসলেই যে তত নেই সেটা মোটামুটি কম শিক্ষিত যে কারও পক্ষেই সহজেই অনুমান করা সম্ভব। দেশের এই খারাপ অবস্থায়ও বলিউড অভিনেতা আনার দরকার কতটুকু ছিল? 

১১ জন স্কুল ছাত্র গাফিলতির জন্য ও দায়িত্বহীনতার জন্য মা-বাবার বুক খালি করে চলে গেল। কিন্তু দায়ীদের জবাবদিহিতা এখনো নিশ্চিত হলো না। সে ১১ জনের মধ্যে আমাদের নিজের সন্তান নেই বলে দু কলম লিখে দায়িত্ব শেষ করে দিচ্ছি

আমাদের দেশ সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র গণতান্ত্রিক দেশ যেখানে বিরোধী দল কে হবে এবং তাদের যে আন্দোলন তো দূরের কথা, কথা বলারও যে সুযোগ নেই তা দেশের আনাচে-কানাচের সলিম উদ্দিন, কলিমউদ্দিনরাও জানে।

এতোগুলা গণমাধ্যম কাজ করছে। একটিও নিরপেক্ষ নেই। এরা জনগণের কথা বলতে সাহস পায়না। বরং, কখনো পরিমনি, কখনো হিরো আলম, কখনো এটা, কখনো সেটা দিয়ে মূল বিষয় হতে সবার দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেয়া হচ্ছে। 

এক রিপোর্টে দেখলাম, সরকারী গাড়ি বাচ্চাদের স্কুলে নামানো, বাসার বাজার করার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। পিয়ন বাজার করতে গিয়েছে, ড্রাইভার দেড় ঘন্টা গাড়িতে এসি ছেড়ে বসে ছিল। কারন জিজ্ঞেস করাতে জানালো, স্যারের বাজার করতে হচ্ছে।

আরেক রিপোর্টে দেখা গেলো, পল্লী বিদ্যুতের হেড অফিস। ফ্যান, লাইট চলছে, কিন্তু রুমে কেউ নাই। আরেক রুমে এসি চলছে, কিন্তু জানালা খোলা। এদিকে সাধারন মানুষের লোডশেডিংয়ে নাভিশ্বাস উঠছে। কি বলবেন?

সরকারি ডিবি পুরা দেশে শুধু ১৫ দিন অভিযান চালানোর মাধ্যমে বাজার সিণ্ডিকেটের ভেঙ্গে চুরমার করে দিতে পারে। কিন্তু না, তারা তা করবেনা। সওদা হয়ে যাচ্ছে মিলিয়ন বিলিয়ন টাকা। পাচারকৃত অর্থ নিয়ে কদিন মাঠ গরম থাকলেও পরবর্তীতে আবার চুপ হয়ে যাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের সেঞ্চুরি করা লম্পট হয়ে যাচ্ছে জাতীয় নেতা। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জয়ী প্রার্থী সবাইকে হতবাক করে দিলেও আমরা সব কিছু স্বাভাবিক নিতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। চারদিকে শুধু দুর্নীতি আর দুর্নীতি। আমরা শাস্তি দিতে পারি অসহায় হিরো আলমকে।একটা ইয়াবা কিং এর একটা লোমও বাঁকা করতে পারি না।

10 February 2022

নির্বাচনে লাশ না পড়লে নির্বাচন কি জমে না?

বাংলাদেশের নির্বাচনে হোক সেটা জাতীয় পর্যায়ে নির্বাচন কিংবা ইউপি নির্বাচন সহিংস ঘটনা না ঘটলে, রক্ত আর লাশ না দেখলে বাঙালির নির্বাচন যেন নির্বাচন মনে হয় না। এইতো চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ইউপি নির্বাচনে প্রাণ গেল ১৩ বছর বয়সের কিশোর মোহাম্মদ তাসিবের। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাবার সেকি আহাজারি, বুকফাটা কান্না, এমন হৃদয়বিদারক ছবি পত্রিকা খুললেই আমরা দেখতে পাই।


কি দোষ ছিল তাসিবের? সে তো কোনো পক্ষের ছিল না। সেতো নির্বাচন নিয়ে মাথা ঘামায় নি। ভোটকেন্দ্রের নিকটেই তার বাসা এটাই তার অপরাধ এজন্যই কি তাকে প্রাণ দিতে হলো। যারা কিশোরসহ মানুষ হত্যা করেছে নির্বাচনের নামে তাদের বিচার কে করবে? এরকম ঘটনার জবাবদিহিতা কি এদেশে কোনদিন নিশ্চিত হবে না? হায় দেশ , হায় জাতি , আফসোস!

পত্রিকাতে আরো দেখতে পেলাম প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য, পরাস্ত করার জন্য, শেষ করার জন্য বন্দুক হাতে নিয়ে গুলি ছুড়ছে দুই যুবক পাশেই কিছু লোক জড়ো হয়ে তামাশা দেখছে। নির্বাচন মানেই কি আমাদের কাছে বুলেট বারুদের গন্ধ, সহিংসতায় লাশ আর রক্তের মাখামাখি,স্বজনের আহাজারি? আমরা কবে বেরিয়ে আসবো এই বীভৎস সংস্কৃতি থেকে? যতদিন বেরিয়ে আসতে না পারব ততদিন আমি ভোট না দেওয়ার পক্ষে।

29 November 2021

ছাত্র আন্দোলন প্রতিহত করার জন্যে ছাত্রলীগ কেন এত আগ্রহী?

ছাত্ররা তাদের ন্যায্য বাস ভাড়ার জন্যে আন্দোলন করছে তাতে আমাদের সবার নিরব সম্মতি রয়েছে। কিন্ত প্রশ্ন হচ্ছে এই আন্দোলন প্রতিহত করার জন্যে ছাত্রলীগ কেন এত আগ্রহী। ছাত্রলীগের কার্যকলাপে মনে হচ্ছ সরকার এই আন্দোলনকে নিজস্ব অশস্তি বিবেচনা করছে যার ফলশ্রুতিতে ছাত্রলীগকে পুলিশ'র দ্বায়িত্ব অর্পন করা হয়েছে। 


বিগত ছাত্র আন্দোলনে একই ফরমেট পরিলক্ষিত হয়। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সম্মতি ছাড়া কিভাবে ছাত্রলীগ এই এ্যাকশনে নামে? সরকার কি জনগনের না লুটেরা বাস শ্রমিক-মালিকের পক্ষে। ছাত্ররা আন্দোলন করতে বা প্রতিবাদ করতে পারছে, যারা বিভিন্ন পেশায় নিয়জিত তারা কিন্তু রাস্তায় নামতে পারছে না, শুধু নিরব সর্মথন করা ছাড়া।

19 November 2021

এবারের ইউপি নির্বাচনঃ গনতন্ত্র এভাবে চলতে পারেনা

এতো খুনোখুনি এতো মারামারি বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কল্পনাই করা যায় না। এরপর আবার একদলীয় নির্বাচন। মন্ত্রী এমপিরা বাসায় বসে পোলাও মাংস খাচ্ছে, আর তাদের নির্দেশে সাধারণ মানুষ একজন অন্যজনের মাথায় আঘাত করছে, এমনকি খুন পর্যন্ত করছে। কি জঘন্য রাজনীতি এদেশে! 


নির্বাচন কমিশন স্বাধীন হয়েও যেনো দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়েছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে - বাংলাদেশে কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থাই নেই এবং কোনো পুলিশ বাহিনীই নেই। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। গাফফার চৌধুরীর মতো ধর্মহীন বুদ্ধিজীবীরা তারপরও বলবে দেশে গনতন্ত্র ভালোভাবে চলছে।

অতঃপর গনতন্ত্র যদি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে বাংলাদেশ একটি সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যার্থ রাষ্ট্রে এবং সর্বশ্রেষ্ঠ স্বৈরাচারী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।

09 November 2021

ব্যাক্তি স্বাধীনতাঃ রাজনীতির অতীত এবং বর্তমান

রাস্ট্রীয় ভাবে রাজনৈতিক দূর্বিত্বায়নের ফলে "আমি বিএনপি কিংবা জামায়াত সমর্থন করি" বলার মতো দুঃসাহস বর্তমান সময়ে কারোরই নাই। ঠ্যাংগারে বাহিনী জানতে পারলে ধন-মানতো যাবেই, হামলা মামলা হবেই, এমনকি জীবন নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে যায়। এমনকি দীর্ঘ দিনের বন্ধু স্বজনের সাথেও রাজনৈতিক তর্ক বিতর্কের ডামাডোলে বন্ধুচ্যুত, স্বজনচ্যুত হতে হয় হামেশাই।


আওয়ামীলীগ বনাম বিএনপি তর্ক বির্তক করার সাহস কিম্বা রুচি কোনটিই আমার নাই। অতএব, নিজেই নিজেকে বিতর্ক থেকে সর্বদা অনেক দূরে সরিয়ে নেই। কখনো আবার ক্রমাগত ব্যক্তিগত আক্রমণ হতে থাকলে বাধ্য হয়ে তাদের থেকে সরে যাই। দুই তরফেই যেটা অবশিষ্ট থাকে তা হল আফসোস, দুঃখ! দিনের শেষে কোন রাজনৈতিক মত সঠিক, কোন মত জয়ী এগুলো অসার হয়ে যায়। বন্ধু হারানোর দুঃখ সেখানে জ্বলজ্বল করে।

অথচ বিগত সময়ে আমাদের বাবা চাচা, তাদের বন্ধু বান্ধবদের তুমুল তর্ক ঝগড়ার সাক্ষী। মুসলিমলীগ- আওয়ামী লীগ- জামায়াত, ন্যাপ, কমিউনিস্ট, জাসদ এর রাজনৈতিক সঠিক লাইন, ভ্রান্ত লাইন নিয়ে তুমুল বিতর্ক, ভয়ংকর ঝগড়া! অথচ তর্ক বির্তক শেষে সবাই সবিস্ময়ে দেখে, যে মানুষগুলির হুংকারে পাড়ার সবাই এতক্ষণ তটস্থ ছিলেন- এখন তাদেরই পিলে চমকানো অট্টহাসিতে আসর মাতোয়ারা! মন কষাকষি একেবারেই অপ্রতুল ছিল এমন নয় কিন্তু তাতে আজকের মতো দহন ছিল না।

আর সবকিছুর মতো তর্কের চরিত্র পালটে ফেলেছে সময়। যে রাজনৈতিক দলটির আমি, আপনি বা আমরা সমর্থক তার নিন্দা আমার, আপনার এবং আমাদের ব্যক্তিগত পরাজয় হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে সম্পর্কে, তর্ক ছুটে চলেছে অনিবার্য সংঘাতের পথে। 

স্বাভাবিক নিয়মে যে যার পক্ষ নেবেনই, তার ঠিক ভুল অবশ্যই থাকবে কিন্তু প্রাজ্ঞ মানুষরা বুঝবেন না যে আসলে প্রত্যেকেরই দুশ্চিন্তা সেই সর্বনাশা শক্তিটির উত্থানের কারণে, ব্যক্তিগত অসূয়া থেকে নয়? কোনো রাজনৈতিক ভুলের কারণে, হঠকারিতার জন্যে সেই শক্তি এ দেশে ক্ষমতাসীন হয়ে গিয়েছে।

এই তর্কের সারাৎসার ধাবিত হবার কথা ছিল দেশ ও জনগণের কল্যাণে, গণতান্ত্রিক অধিকার, মৌলিক মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। অথচ ফল হয়েছে বিপরীত।

বর্তমানে ক্ষমতাধর মানুষ হতে লাগে বিবেক বর্জিত দানবীয় পশুর মতো পেশীশক্তি। থাকতে হবে হিংস্রতা। প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করতে হবে বর্বরোচিত নিষ্ঠুরতায়- তা না হলে কিসের ক্ষমতাধর!

তুমুল তর্ক শেষে আমরা পরস্পরের প্রতি পুঞ্জিভূত ক্ষোভ নিয়ে ঘুমোতে যাই। সকালে উঠে ঝগড়া একপাশে রেখে পরদিন সামনা-সামনি দেখা হলে জিজ্ঞেস করতে পারি না- "বন্ধু, কী খবর বল"?

31 October 2021

সাম্প্রদায়িকতা থেকে এই উপমহাদেশের মুক্তি ঘটবে কি কখনো?

আমাদের দেশসহ এই উপমহাদেশের দেশগুলোর মানুষের মুক্তি আসেনি বহু কিছু থেকেই। বিবেকবর্জিত সমস্ত কাজ-কারবার, দুর্নীতি, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা, লুটপাট, মেয়েদের প্রতি খারাপ দৃষ্টিভঙ্গি, দালালী, সংকীর্ণ স্বার্থান্ধ রাজনীতি থেকে শুরু করে অসংখ্য নেতিবাচক উপাদানে ভীষণ রকমের নোংরা চোরাস্রোতে নিমজ্জিত সমাজ আমাদের। সময়ে সময়ে এগুলোর এক একটি এমন বিকট রকমের বীভৎস খেলা চালাতে থাকে যা দেখে মাঝে মাঝে মনে হয় যেন সেই হলিউডি জম্বি সিনেমার মতো এইসব নেতিবাচক ব্যাপার-সেপারগুলোর কোনও বাস্তব চিত্রায়ন হচ্ছে। দিনে দিনে এগুলো যেন জটিল থেকে আরও জটিলতার দিকে চলে যাচ্ছে। যেন এক অভিশপ্ত নোংরা আবর্ত, যা থেকে উদ্ধার পাওয়া সুদূর পরাহত। এদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে ধর্মান্ধতা আর সাম্প্রদায়িকতা, যার কারণে এতো সমালোচনা করি, কথা বলি এটা নিয়ে। 


আমাদের বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা সব দেশেরই অনেক রক্তাক্ত ইতিহাস আছে এর। উপমহাদেশের বিভক্তি হয়েছিলো এখানকার প্রধান দুই ধর্মের, প্রধান দুই সম্প্রদায়ের চাহিদা অনুযায়ী, দাবী অনুযায়ী। সেটা বাস্তবায়িত হয়েছিলো এ অঞ্চলের ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তাক্ত অধ্যায়ের করুণ এক চিত্রায়নের মাধ্যমে। দুই সম্প্রদায়ের দাবীমতো আদায় হওয়া, বিভক্ত হওয়া অঞ্চলে শান্তি আসেনি তারপরও। দুই সম্প্রদায়ের মানুষেরাই দাবী করে তাদের ধর্ম শান্তির ধর্ম তারপরও দুই ধর্মের দুই সম্প্রদায়ই একে অপরের ওপর সাম্প্রদায়িক নিপীড়কের ভূমিকা নেয় বারে বারে এবং এমন সমস্ত কাজ করে, নজীর তৈরি করে যা তাদের ধর্ম কখনোই তাদের এগুলো করার কথা বলে নাই। সাম্প্রদায়িকতা এতোই বিষাক্ত এক জিনিশের নাম। 

বিষাক্ত সাম্প্রদায়িকতা রক্ত ঝরিয়েছে বার বার। এর বশবর্তী হয়ে এই দুই সম্প্রদায়ের মানুষজন এমন সমস্ত নজীর তৈরি করে রেখেছে যা দেখলে হয়তো হিটলারও লজ্জা পেতো। দেশবিভাগে কয়েক কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিলো। দেশবিভাগের পর সময়ে সময়ে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হয়ে আজ পর্যন্ত আরও কয়েক কোটি মানুষকে বাস্তুভিটা হারাতে হয়েছে, দেশান্তরী হতে হয়েছে এবং মরতে হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। সবচেয়ে নির্মম বাস্তবতা আর তিক্ত সত্য হলো শান্তি আসবে না তারপরও। কারণ এর মূল উপাদান ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ আর নোংরা রাজনীতি। 

এগুলো ভালোভাবেই ক্রিয়াশীল রয়েছে এই সমাজে এবং দিনকে দিন মানুষের মধ্যে যেভাবে ফের ধর্মান্ধতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, চাগিয়ে উঠছে তাতে অন্তত এটা পরিস্কার যে ভবিষ্যতেও এর কোনও সমাধান হবে না। ভারতে তাদের আমজনতার ম্যানডেট নিয়েই ক্ষমতায় এসেছে সাম্প্রদায়িক বিজেপি, যদিও সাম্প্রদায়িক নিপীড়ন বরাবরই ছিল, পাকিস্তানে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন সময়ে সময়ে সাম্প্রদায়িক নিপীড়ন সবাই করেছে, বাংলাদেশেও বলতে গেলে সেটাই হয়ে এসেছে দেশ স্বাধীন হবার পর থেকে। যেন এক কঠিন অভিশাপে অভিশপ্ত আমরা এবং এর থেকে মুক্তি পাওয়া সুদূর পরাহত।

21 October 2021

ইসলাম কখনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উস্কে দেয়াকে সমর্থন করে না

সম্প্রতি দেশজুড়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গা পুজা। কিন্তু নিতান্ত দুঃখজনক বিষয়, কুমিল্লা এলাকার একটি পূজামণ্ডপে মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ পবিত্র আল কুরআনের অবমাননার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপাসনালয়, তাদের ঘরবাড়ি ইত্যাদির ওপর দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের খবরের সঙ্গে কিছু স্বার্থান্বেষী মহলকে প্রমাণ ছাড়া যুক্তিহীনভাবে যাকে তাকে দোষারোপ করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টাও চালাতে দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ এই সুযোগকে ইসলামপন্থীদের শায়েস্তা করার কাজে লাগাতে উঠেপড়ে লেগেছেন। 


বস্তুতঃ ইসলাম কখনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উস্কে দেয়াকে আদৌ সমর্থন করে না। প্রকৃত কথা হচ্ছে, যেসব অপরাধীরা এ ধরনের নারকীয় তান্ডব ঘটিয়ে থাকে, তারা নিজেদের যদি ইসলাম ধর্মের অনুসারী দাবিও করে থাকেন, তবু সত্যিকারার্থে তারা ইসলাম ধর্মের আদর্শের কেউ নন। তারা ইসলাম ধর্মের আদর্শ, আবেগ, অনুভূতি জলাঞ্জলী দিয়ে অন্যায় অত্যাচারে লিপ্ত হওয়ার কারণে তারা শুধু ইসলাম ধর্মের শত্রুতেই পরিণত হননি, বরং মানবতারও এরা শত্রু। কারও ঘরে অগ্নিসংযোগ করে বাড়িঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়া, বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট করে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি সাধন করা - এগুলো সাধারণ কিংবা ক্ষমার যোগ্য কোন অপরাধ নয়। এসব কাজ জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল। এসব অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি অবশ্যই হওয়া উচিত। 

সেই সাথে কঠোর থেকে কঠোরতম পন্থায় তাদেরও শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন যারা পবিত্র আল কুরআন অবমাননার সাথে জড়িত। এইক্ষেত্রে উপযুক্ত ও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণসহ অপরাধীকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার মত করে বিচারের নামে ভিন্নমত পোষনকারীদের দমনে এই ঘটনাকে ব্যবহার করা হলে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবার আশা করা দূরুহ। আর তাছাড়, সুনিশ্চিত প্রমাণ ছাড়া কাউকে হয়রানি করা কিংবা অন্যায়ভাবে নিরপরাধ ব্যক্তিকে শাস্তি প্রদান করা আরেকটি গর্হিত অপরাধ। এতে করে স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বৈরাচারিতা এবং বিচার ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের বিশ্বাস, ভক্তি এবং শ্রদ্ধাবোধ বিনষ্ট হবে। বিচার হাতে তুলে নেয়ার মত ঘটনার জন্ম হওয়ার এটিও একটি অন্যতম কারণ।

11 October 2021

বেপরোয়া ছাত্রলীগকে থামাবে কে?

ছাত্রলীগকে এখন আর কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কারো নিয়ন্ত্রণই যেন মানতে চাইছে না তারা। কারো পরোয়াই করছে না। ছাত্রলীগের ইচ্ছা-অনিচ্ছাই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে সবখানে। টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে এমন কোনো অপকর্ম নেই, যেখানে ছাত্রলীগ নেই। পত্রিকায় ছাত্রলীগের অপকীর্তির খবর বের হচ্ছে নিয়মিত।


অথচ একসময় ছাত্ররাজনীতিতে আসত মেধাবী ছাত্ররা। ছাত্ররাজনীতির সেই সোনালি দিন এখন আর নেই। এখন ছাত্ররাজনীতিতে যাদের দেখতে পাওয়া যায়, তাদের অনেকেই অছাত্র। এদের আধিপত্য রক্ষায় অনেক ছাত্রের ছাত্রজীবন চলে যাচ্ছে। ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে সিট পাওয়া যায় না। অপরাজনীতির ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হচ্ছে ছাত্রদের। তাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে অস্ত্র। নগদ টাকার প্রলোভন ত্যাগ করা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। নগদ প্রাপ্তির লোভেই অনেক ছাত্র জড়িয়ে যাচ্ছে টেন্ডারবাজিতে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একসময় ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানও যেন অগ্রাহ্য করা হয়েছে। বিশেষ করে ছাত্রলীগ যখন সরাসরি সন্ত্রাস ও দখলদারিত্বের অপরাজনীতির সঙ্গে জড়িত হয়ে যায়, তখন তো বলতেই হয়, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান অগ্রাহ্য করেছে তারা। হ্যাঁ, ছাত্রলীগে ভেজাল ঢুকে গেছে, এ কথা হয়তো সত্য। নিজেদের রক্ষা করতে অনেকেই ছাত্রলীগে নাম লেখাতে পারে। কিন্তু এই ছাত্রলীগ যারা নিয়ন্ত্রণ করেন, তাঁদের এখানে ভূমিকাটা কী? নাকি তাঁরাই ব্যবহার করছেন ছাত্রলীগকে?

আমাদের দেশের রাজনীতিতে পেশিশক্তির ব্যবহার নতুন কিছু নয়। পেশিশক্তি বারবারই দেশের রাজনীতিকে কলুষিত করেছে। সে পথেই যদি ছাত্রলীগ যায়, বেছে নেয় সন্ত্রাসের পথ, তাহলে মানুষের দাঁড়ানোর জায়গাটি আর কোথায় থাকে? তাই শক্ত হাতে দমন করতে হবে ছাত্র নামধারী ছাত্রলীগ নামক এ দুর্বৃৃত্তদের। আর কত সহ্য করবে দেশের মানুষ? ছাত্ররাজনীতির নামে এ সন্ত্রাস আর কত?

01 October 2021

বিদেশে বসে বাংলাদেশ ভিত্তিক রাজনীতি চর্চার কি দরকার?

বিদেশে বসে বাংলাদেশ ভিত্তিক রাজনীতি চর্চার কি আসলেই কোন প্রয়োজন আছে? এটি কোন মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন নয়। খুব সহজ একটি প্রশ্ন। সরল সমীকরণ আর উপলব্ধিই এখানে মূখ্য বিষয়। আলোর পেছনেই যেহেতু অন্ধকার, তাই দূর প্রবাসে বাংলা স্টাইলে দেশি রাজনীতি চর্চার ভালোমন্দ বেশকিছু বিবেচ্য বিষয় বিবেকের দুয়ারে কড়া নাড়ে প্রতিনিয়ত।


বিদেশের মাটিতে দেশী রাজনীতি চালু থাকলে তার ‘ডিরেক্ট বেনিফিট’ বাংলাদেশের বিশেষ এক শ্রেনীর মন্ত্রী বাহাদুর ও রাজনীতিবিদদের। ভিনদেশের বিমানবন্দরে ফুলের মালা, বিলাসবহুল হোটেলে তোষামোদি ও চাটুকারিতা উপভোগ, রকমারী ফ্রি শপিং, বৈচিত্রে ভরপুর সব উপঢৌকন, কারো কারো ক্ষেত্রে মধ্যরাতের লাল-নীল সর্বোচ্চ বিনোদন, দিনের আলোতে সস্তা গণসংবর্ধনা সহ আরো কত কি। এতো গেলো সেবাগ্রহীতার কথা, যারা এসবের যোগান দেন সেইসব সেবাদাতাদের প্রাপ্তির হিসেব-নিকেশ না তুলে ধরলে তাদের প্রতি অন্যায় করা হবে বৈকি!

প্রবাসীর খাতায় নাম লেখাবার আগে তথা বাংলাদেশে অবস্থানকালীন সময়ে রাজনীতি করার সুযোগ না পেলেও বিদেশে এসে আজ অনেকেই বড় বড় নেতা হয়ে ভিজিটিং কার্ডটি বানাচ্ছেন সবার আগে। নির্বাচনের আগে ও পরে এমনকি অনেকে বছরের বিভিন্ন সময় দেশে গিয়ে, কেউ কেউ আবার দীর্ঘসময় ঢাকায় অবস্থান করে বহুমুখী দৌড়ঝাপ করে কমবেশ আখের গোছাতে সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। টমাটো-বেগুণের জমি লীজ নেয়া থেকে শুরু করে পেট্রোল পাম্প, রাজউকের প্লট, ইনস্যুরেন্স কোম্পানি এমনকি ব্যাংকের মালিকানা সহ আরো কতো কিছুর কথাই আজ দেশে দেশে ওপেন-সিক্রেট। 

উপকারি গাছের ছাল থাকুক বা নাই থাকুক তাতে কারো কিছু যায় আসে না ঠিকই, তবে প্রবাসে দেশী রাজনীতির বিষবৃক্ষ থেকে উপকার পেতে গিয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন আজ অনেকেই। কংগ্রেস-বিজেপি বা তৃণমূলের রাজনীতি ভারতীয়দের প্রবাস জীবনকে বিশ্বের কোথাও কলংকিত না করলেও বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ভয়াবহ ব্যতিক্রম। বাংলাদেশ ভিত্তিক নোংরা রাজনীতির করাল গ্রাসে দেশে দেশে দিশেহারা আজ কমিউনিটি। বিশ্বব্যাপী প্রবাসী বাংলাদেশিদের অগ্রযাত্রার প্রধাণতম অন্তরায় এটি।

বিভিন্ন দেশের স্থানীয় সমাজের সাথে বাংলাদেশের নাগরিকদের ইন্টিগ্রেশনের প্রধান অন্তরায় বাংলাদেশ ভিত্তিক রাজনীতি চর্চা, যা একাধারে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ এসোসিয়েশনগুলোকে নিষ্ক্রিয় করার পাশাপাশি ছড়িয়ে দিচ্ছে আঞ্চলিকতার বিষবাষ্প। গভীর হতাশার সাথে লক্ষ্য করা যায়, দেশে দেশে মেইনস্ট্রিম রাজনীতিতে আমাদের লোকজনের অংশগ্রহনের পথে মূল প্রতিবন্ধকতার কারনও সেই দেশী নোংরা রাজনীতি।

বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় আইনে পুরোপুরি অবৈধ ও অপরাধ হলেও বাংলাদেশের রাজনীতির আনুষ্ঠানিক চর্চা করতে গিয়ে মারামারি-কাটাকাটি দেশে দেশে থেমে নেই, দিনকে দিন বরং বেড়েই চলেছে। নিউইয়র্ক, লন্ডন, জেদ্দা, টোকিওর মতো স্থানে হাতাহাতি ধস্তাধস্তি রক্তারক্তি এমনকি খুনের ঘটনাও ঘটেছে। রোম-লন্ডনে অপবিত্র করা হয়েছে স্থানীয় শহীদ মিনার। অধিকাংশ দেশে বাংলাদেশ কমিউনিটিকে সুনিশ্চিতভাবে বিভক্ত করে রেখেছে এই রাজনীতি চর্চা।

সবচাইতে হতাশাজনক বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রধাণমন্ত্রীর লন্ডন-নিউইয়র্ক সফরের সময় যে তুলকালাম কান্ড ঘটে প্রতিনিয়ত, তাতে বাংলাদেশের তোষামোদপ্রিয় রাজনীতিবিদদের লজ্জ্বা না হলেও বিনষ্ট হয় লাল-সবুজ পতাকার ভাবমূর্তি, স্থানীয় সমাজে চরম অপমানিত হন খেটে খাওয়া প্রবাসীরা। একসাগর রক্তের বিনিময়ে যাঁরা আমাদেরকে একাত্তরে এনে দিয়েছিল স্বাধীনতা, সেইসব বীর শহীদদের আত্মার শান্তির জন্যে হলেও আজ সময় এসেছে দূর প্রবাসে বাংলাদেশ ভিত্তিক নোংরা রাজনীতিকে না বলার।

19 September 2021

ইভ্যালির প্রতারণাঃ দোষ কি শুধু রাসেল দম্পতির?

সাইক্লোন অফারের সাইক্লোনেই যেন ধ্বংস হলো ইভ্যালি। হাজার কোটি টাকার দেনা আর লক্ষ গ্রাহকের আর্থিক ক্ষতির দায় মাথায় নিয়ে রিমান্ডে রাসেল দম্পতি আরেকটি যুবক-ডেস্টিনির গল্প তৈরি হবার শংকা অর্থনীতিবিদদের। কিন্তু এই লক্ষ গ্রাহকের আর্থিক ক্ষতির পেছনে দোষ কি শুধু রাসেল দম্পতির?


ইভ্যালির মতো প্রতিষ্টানের প্রতারণার পেছনে দোষ আছে সরকারেরও। প্রতিষ্ঠানটি গোপনে তার ব্যবসা পরিচালনা করেনি। যে পরিামাণ বিজ্ঞাপন দিয়ে তারা ব্যবসা করেছে, তাতে সরকারের নীতিনির্ধারকদের এ বিষয়টা না জানার কথা নয়। তাছাড়া তারা বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের স্পনসরও হয়েছিল। 

ইভ্যালি ব্যবসা শুরু করার সময়ই বোঝা গিয়েছিল তারা প্রতারণা করবে। তারা অর্ধেক দামে পণ্য বিক্রির অফার দিয়েছিল। অনেক মানুষ বিনিয়োগ করেছে। অন্য সবকিছু বাদ দিলেও প্রতিযোগিতা আইন অনুযায়ী, এই ধরনের ব্যবসা চলতে পারে না। কিন্তু সরকার সময়মতো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

ইভ্যালিকে প্রতারণা করার সুযোগ করে দিয়েছে ক্রেতাদের লোভও। ৫০ হাজারের জিনিস ২৫ হাজারে, বা ৪ লাখের জিনিস ২ লাখে পাবার লোভ। এই লোভের কবলে পড়ে ছেলে টাকা ধার করেছে মা-বাবার কাছ থেকে, বন্ধু টাকা ধার করেছে বন্ধুর কাছ থেকে। অনেকে আবার বিক্রি করে দিয়েছে নিজের শেষ সম্বল। 

এই ক্রেতাদের বড় একটা অংশ আবার ইভ্যালিতে টাকা “বিনিয়োগ” করেছে ব্যবসা করার সহজ সুযোগ হিসেবে। ৫০ হাজারের জিনিস ২৫ হাজারে কিনে ৪০ হাজারে বিক্রির জন্য বা ৪ লাখের জিনিস ২ লাখে কিনে ৩ লাখে বিক্রির জন্য। কোন কষ্ট ছাড়া ১৫ হাজার বা ১ লাখ টাকা লাভের চকচকে লোভ এড়ানো কঠিন।