09 November 2021

ব্যাক্তি স্বাধীনতাঃ রাজনীতির অতীত এবং বর্তমান

রাস্ট্রীয় ভাবে রাজনৈতিক দূর্বিত্বায়নের ফলে "আমি বিএনপি কিংবা জামায়াত সমর্থন করি" বলার মতো দুঃসাহস বর্তমান সময়ে কারোরই নাই। ঠ্যাংগারে বাহিনী জানতে পারলে ধন-মানতো যাবেই, হামলা মামলা হবেই, এমনকি জীবন নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে যায়। এমনকি দীর্ঘ দিনের বন্ধু স্বজনের সাথেও রাজনৈতিক তর্ক বিতর্কের ডামাডোলে বন্ধুচ্যুত, স্বজনচ্যুত হতে হয় হামেশাই।


আওয়ামীলীগ বনাম বিএনপি তর্ক বির্তক করার সাহস কিম্বা রুচি কোনটিই আমার নাই। অতএব, নিজেই নিজেকে বিতর্ক থেকে সর্বদা অনেক দূরে সরিয়ে নেই। কখনো আবার ক্রমাগত ব্যক্তিগত আক্রমণ হতে থাকলে বাধ্য হয়ে তাদের থেকে সরে যাই। দুই তরফেই যেটা অবশিষ্ট থাকে তা হল আফসোস, দুঃখ! দিনের শেষে কোন রাজনৈতিক মত সঠিক, কোন মত জয়ী এগুলো অসার হয়ে যায়। বন্ধু হারানোর দুঃখ সেখানে জ্বলজ্বল করে।

অথচ বিগত সময়ে আমাদের বাবা চাচা, তাদের বন্ধু বান্ধবদের তুমুল তর্ক ঝগড়ার সাক্ষী। মুসলিমলীগ- আওয়ামী লীগ- জামায়াত, ন্যাপ, কমিউনিস্ট, জাসদ এর রাজনৈতিক সঠিক লাইন, ভ্রান্ত লাইন নিয়ে তুমুল বিতর্ক, ভয়ংকর ঝগড়া! অথচ তর্ক বির্তক শেষে সবাই সবিস্ময়ে দেখে, যে মানুষগুলির হুংকারে পাড়ার সবাই এতক্ষণ তটস্থ ছিলেন- এখন তাদেরই পিলে চমকানো অট্টহাসিতে আসর মাতোয়ারা! মন কষাকষি একেবারেই অপ্রতুল ছিল এমন নয় কিন্তু তাতে আজকের মতো দহন ছিল না।

আর সবকিছুর মতো তর্কের চরিত্র পালটে ফেলেছে সময়। যে রাজনৈতিক দলটির আমি, আপনি বা আমরা সমর্থক তার নিন্দা আমার, আপনার এবং আমাদের ব্যক্তিগত পরাজয় হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে সম্পর্কে, তর্ক ছুটে চলেছে অনিবার্য সংঘাতের পথে। 

স্বাভাবিক নিয়মে যে যার পক্ষ নেবেনই, তার ঠিক ভুল অবশ্যই থাকবে কিন্তু প্রাজ্ঞ মানুষরা বুঝবেন না যে আসলে প্রত্যেকেরই দুশ্চিন্তা সেই সর্বনাশা শক্তিটির উত্থানের কারণে, ব্যক্তিগত অসূয়া থেকে নয়? কোনো রাজনৈতিক ভুলের কারণে, হঠকারিতার জন্যে সেই শক্তি এ দেশে ক্ষমতাসীন হয়ে গিয়েছে।

এই তর্কের সারাৎসার ধাবিত হবার কথা ছিল দেশ ও জনগণের কল্যাণে, গণতান্ত্রিক অধিকার, মৌলিক মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। অথচ ফল হয়েছে বিপরীত।

বর্তমানে ক্ষমতাধর মানুষ হতে লাগে বিবেক বর্জিত দানবীয় পশুর মতো পেশীশক্তি। থাকতে হবে হিংস্রতা। প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করতে হবে বর্বরোচিত নিষ্ঠুরতায়- তা না হলে কিসের ক্ষমতাধর!

তুমুল তর্ক শেষে আমরা পরস্পরের প্রতি পুঞ্জিভূত ক্ষোভ নিয়ে ঘুমোতে যাই। সকালে উঠে ঝগড়া একপাশে রেখে পরদিন সামনা-সামনি দেখা হলে জিজ্ঞেস করতে পারি না- "বন্ধু, কী খবর বল"?