সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যু নিয়ে ফেসবুকে ব্যাঙ্গাত্মক পোস্ট দেয়ার অভিযোগে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষিকা সিরাজাম মুনিরাকে ১৩ জুন গভীর রাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর মোহাম্মদ নাসিমের সময়ে স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী জাহিদুর রহমানকে গভীর রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা জামিন পাননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন অধ্যাপককে গ্রেফতার করায় যারা মুক্তচিন্তা করতে চায় তারা আতঙ্কের মধ্যে পড়েছে।
মত প্রকাশের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়লে মানুষ হতাশ হয়ে ঝুঁকে পড়বে উগ্রপন্থার দিকেই। স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়ে বহু রিপোর্ট পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ফলে সে নিয়ে মানুষ ফেসবুকে লিখে যদি ক্ষোভ প্রশমন করে তবে তা ভাল হিসেবেই বিবেচনা করা যেতে পারে। গত ৫ বছরে বাংলাদেশে অন্তত ৬০ জন মানুষ জঙ্গীদের হামলায় নিহত হয়েছেন। বাংলাদেশ যেকোনো ধরনের উগ্রপন্থা ছড়িয়ে পড়ার সঠিক ক্ষেত্র হিসেবে অনেক আগে থেকেই চিহ্নিত হয়ে আছে। এমন গ্রেফতার মানুষের মধ্যে হতাশা ও ভীতি বাড়িয়ে দিবে।
আমরা দেখি অধিকাংশ শিক্ষক ও সচেতন মানুষই আজকাল ফেসবুকে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকছেন। তারা আশঙ্কা করেন, এতে কোন ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে পারেন। চাকরি হারাতে পারেন। এ দুটি গ্রেফতার তাদের আশঙ্কাকে হাজারগুণ বাড়িয়ে দিল। সমাজের শিক্ষিত ও সচেতন মানুষরাই অন্যদের এগিয়ে নেয়ার জন্য ভাবাদর্শ গঠন করে দেন। যদি মুক্তভাবে ফেসবুক-ব্লগসহ বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়াতে লেখা যেতো তাহলে মানুষ বিতর্কটা শুনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারতো। উগ্রপন্থাকে নাশ করার জন্য স্বাধীনভাবে লেখার সুযোগ খুবই জরুরী।
চুপ করে থাকলে উগ্রপন্থীরাতো চুপ করে থাকবে না। তারা সামাজিক মাধ্যমে সমাস্যায় পড়লে সরাসরি যোগাযোগ করবে। যদি সঠিক তথ্য নিয়ে হাজির হওয়া না যায় তবে উগ্রপন্থাকে মোকাবেলা করা যাবে না। ভারতে মৌলবাদের বিকাশ আমাদের জন্য আরো ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার মধ্যে করোনা বহু মানুষকে কর্মহীন করে দিয়েছে। তারা দাঁড়িয়ে আছে হতাশা ও ভয়ঙ্কর চাপের মধ্যে। এই হতাশাগ্রস্থ ও চাপের মধ্যে থাকা তরুণদের উগ্রপন্থার দিকে টেনে নেয়া সহজ হয়ে যাবে।