মিজানুর রহমান তার নাম। তবে মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার কারণে তার নামের সাথে ‘আজহারী’ উপাধি যুক্ত হয়েছে। সুশিক্ষায় শিক্ষিত তরুণ বক্তা, ইসলামিক স্কলার মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী। আধুনিক চিন্তার মানুষ। তিনি অল্প কয়েকদিনে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছেন। বর্তমানে যে ক’জন ইসলামি চিন্তাবিদ রয়েছেন, তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। মিজানুর রহমান আজহারী ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তার দুটি কন্যাসন্তান রয়েছে। আজহারী বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইসলামী বক্তা হিসেবে আলোচনা করেছেন।
তিনি ১৯৯০ সালের ২৬ জানুয়ারি ঢাকার ডেমরায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস কুমিল্লার মুরাদনগরের পরমতলা গ্রামে। তার বাবা একজন মাদরাসার শিক্ষক। তার পরিবারে মা-বাবা ও এক ভাই রয়েছে। কুরআন-হাদিসের সহজ-সাবলীল আলোচনা করে অসংখ্য মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। তার গবেষণাধর্মী আলোচনার কারণে তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। তিনি বাংলা, আরবি, ইংরেজি ভাষায় খুবই দক্ষ। তার একটি ফেসবুক আইডি ও একটি অফিসিয়াল ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ রয়েছে। ব্যক্তিগত কোনো ইউটিউব চ্যানেল নেই। বছরের বেশিরভাগ সময় তিনি মালয়েশিয়ায় থাকেন।
২০০৭ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত মিসর সরকারের শিক্ষাবৃত্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডারগ্রাজুয়েট করার জন্য মিশরে যান। মিশরে পাঁচ বছর শিক্ষাজীবন অতিবাহিত করার পর ২০১৩ সালে মালয়েশিয়া যান। সেখানে গার্ডেন অব নলেজ খ্যাত ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে পোস্ট-গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। ২০১৬ সালের মধ্যে এমফিলও শেষ করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল ‘হিউম্যান এম্ব্রায়োলজি ইন দ্য হোলি কুরআন’। তারপর একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হন। ‘হিউম্যান বিহ্যাভিয়ারেল ক্যারেক্টারইসটিক্স ইন দ্য হোলি কুরআন অ্যান্ড অ্যানালিটিক্যাল স্টাডি’র ওপর পিএইচডি গবেষণা করছেন। তার এমফিল এবং পিএইচডির মাধ্যম ছিল ইংরেজি।
বর্তমান সময়ের যুবকরা তাকে খুবই পছন্দ করে। তার তাফসির মাহফিলে যুবকদের স্রোত দেখা যায়। তিনিও যুবকদের খুবই পছন্দ করেন। মাহফিলে যুবকদের ভালো পথে চলার আহ্বান জানান। আজহারী বলেন, আমরা আমাদের জীবনের একটা উল্লেখযোগ্য সময় কাটিয়ে দেই অন্যকে হিংসা করতে করতে। নিজেরা কাজ না করে অন্যের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে আমরা মহা ব্যস্ত। আসলে, অপপ্রচার করে তেমন কোন লাভ নেই। অপপ্রচারে আমি কখনো মন:ক্ষুন্ন হই না। আমার বিশ্বাস আপনারাও হবেন না। কারন অপপ্রচারগুলোই আমাদের প্রচারণার দায়িত্ব পালন করছে। বাঁধা, বিপত্তি আসবেই। এটাই স্বাভাবিক। যে পথে কাঁটা নেই সেটা পথ নয়, সেটা কার্পেট।
আজহারী সুশিক্ষায় শিক্ষিত একজন মানুষ। মিজানুর রহমান আজহারী নম্র, ভদ্র এবং উদার মনের একজন মানুষ। হিংসা, বিদ্বেষ ও অহংকারের ছিটেফোঁটাও নেই তার মাঝে। তিনি কখনো কাউকে আঘাত দিয়ে কথা বলেন না। তিনি বিশ্বাস করেন, যুবকরা ভালো পথে চললে ও ইসলামের সাথে থাকলে এগিয়ে যাবে একটি দেশ, সুন্দর হবে একটি সমাজ। আল্লাহর রহমতে তিনি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি আল্লাহ তাআলা তাকে দিয়েছেন সুমধুর কন্ঠস্বর। সবশেষে, নিন্দুকের নিন্দা থাকবেই! তবে, আজহারীরা প্রতিদিন জন্ম নেয় না। জ্ঞান-গবেষণায় তিনি ধ্রুবতাঁরা।
কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন- আজহারী ওয়াজ মাহফিলে সাদাসিধে সাধারণ জীবনযাপনের কথা বলেন তাহলে উনি কেন ৫ কোটি টাকার বিলাসবহুল গাড়িতে চড়েন। তাহলে কি তিনি বিলাসী জীবন, আরাম-আয়েশ করার জন্যই মালয়েশিয়ায় ফিরে গেছেন? প্রশ্নের উত্তরে আজহারী বলেন, সিঙ্গাপুর বিজনেস চেম্বার এন্ড কমার্সেও সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদুজ্জামান টরিক ভাইয়ের গাড়ি এটা। গত বছর সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশি এলিট সোসাইটির একটি গেদারিং এ আলোচনা রাখার জন্য তারা আমাকে ইনভাইট করেছিলেন। পাঁচ দিনের সফরে তখন সিঙ্গাপুর গিয়েছিলাম। ওই সফরে শখ করে সিঙ্গাপুর শহরে তারেক সাহেবের গাড়িটি ড্রাইভ করেছিলাম। মিথ্যাবাদীরা এটাকে এখন আমার গাড়ি বানিয়ে দিয়েছে।'