24 November 2019

নিয়ন্ত্রনহীন বাজার ও সরকারের উদাসীনতা

সেদিন পত্রিকায় দেখলাম এক মহামানব বলেছেন বাজারে কোন নিত্যপণ্যের ঘাটতি নেই, পেঁয়াজের কথা বলছেন, বাজারে আছে তো সব। আমরাও জানি বাজারে সবি আছে, শুধু সাধারণ মানুষের পকেটে টাকা নেই। একজন কৃষক কে দুই মণ ধান বিক্রি করতে হয় এক কেজি পিঁয়াজ ক্রয়ের জন্য। উনাদের কথা শুনলে মনে হয় উনারা ভিন্ন গ্রহের প্রাণী বা আমার সাধারণ জনগণ কে সাধারণ কিটপতঙ্গ মনে করেন। টাকার মান কত কমতেছে, সাধারণ মানুষ কত কষ্টে আছে- সে ধারণা উনাদের নেই। এই রকম বিকালঙ্গ জ্ঞান নিয়ে এই পদ কিভাবে অলংকৃত করে আছেন তা গবেষণার বিষয়।

উনি কেন, সরকার প্রধানকেও বলতে শুনেছি, আপনার তরকারিতে পিঁয়াজ কম খান। সাধারণ মানুষ তো ঠিকমতো খেতেই পারছেনা, কম খাবে কি! পেঁয়াজ না হয় খেলাম না; আপনারা চাল, ডাল, লবন সব নিত্যপণ্যের বাজার কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না? আপনারা বলেন মুক্ত বাজার অর্থনীতির কথা। এটা শুধুই অজুহাত। যারা বলছেন তাদের মুক্তবাজার অর্থনীতির সম্পর্কে ধারণা খুব বেশি আছে বলে মনে হয় না। বিশ্বায়নের যুগে মুক্তবাজার অর্থনীতির গতি রোধ করা সম্ভব নয়। একটি পন্যের বৈশ্বিক ঘাটতি থাকলে বা চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকলে দাম বৃদ্ধি পাবে, প্রতিযোগিতা মূলক বাজার থাকবে, সরকারের হস্তক্ষেপ কম থাকবে- মুক্ত বাজার অর্থনীতির ধারনা তাই বলে।

আরো পরিষ্কার করে সংক্ষেপে বললে যা হয় - মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাজারকে কেন্দ্র করে সে দেশের পণ্যের গুণগতমান, ক্রয়-বিক্রয় এবং মূল্য নির্ধারিত হয়। এ ব্যবস্থায় সাধারণ ব্যক্তিবর্গের ভোক্তা, শ্রমিক এবং বিনিয়োগকারী হিসেবে নিযুক্ত থাকা আবশ্যক। ভোক্তাদের ক্রয়ের ইচ্ছার উপর উৎপাদন প্রভাবিত হয়। বিনিয়োগকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে এবং শ্রমিকরা নিজেই কাজের সন্ধান করে। এ ব্যবস্থায় পণ্য ও সেবা বিনিয়োগের কেন্দ্রস্থল হলো বাজার। উৎপাদিত পণ্য ও সেবার চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রিত হয়। মুক্তবাজার ধারণায় ব্যক্তি তার দক্ষতার কারণে উচ্চতর আয় দাবি করতে পারে। এই পদ্ধতিতে সরকার সরাসরি বাজার নিয়ন্ত্রণ করে না তবে সংশ্লিষ্ট সকলের স্বার্থরক্ষায় সরকার বাজার রক্ষণাবেক্ষণ করে।

কিন্তু আমাদের দেশে যা হচ্ছে তা হল ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে একচেটিয়া বাজার কায়েম করে যাচ্ছে বা কৃত্রিম ভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। সরকার কি করবে মুক্ত বাজার অর্থনীতির নামে হাত গুটিয়ে বসে থাকবে নাকি মনোপলি মাকের্ট সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রোধে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রতিষেধক দেবে। কিন্তু সরকারি লোকজনের কথা শুনলে মনে হয় তারা আগুনে আরো ফু দিচ্ছে অথবা যে সব উঝাকে দায়িত্ব দিয়েছে ভুত তাড়াতে, তারাই প্রকৃত ভুত। দায়িত্বহীন কথাবার্তা আমরা সাধারণ জনগণ জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে আশা করি না অথবা এই সব কথাবার্তা বলে তাঁরাই প্রমাণ করে যে সাধারণ মানুষের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। তাঁরা শুধু তাদেরই প্রতিনিধিত্ব করে যারা তাদের কে বিভিন্ন সময়ে চাঁদা বা ডোনেশন দিয়ে সহায়তা করে।