07 October 2019

আবরার হত্যাঃ এমন স্বাধীনতা কে চেয়েছিলো?

৭১এ অর্জন করি আমরা স্বাধীনতা। স্বাধীনতার ৪৮ তম বছরে এসে আমরা কি পাচ্ছি স্বাধীনতা? স্বাধীনতা হারিয়েছি সেদিনই, যেদিন বাংলাভূমি থেকে হারিয়েছে গণতন্ত্র। বিনা নির্বাচন এবং একপাক্ষিক ভোটে সরকার তার আসন ঠিকই আঁকড়ে রেখেছেন কিন্তু মুঁছে দিয়েছেন বাংলাভূমির প্রতিটি মানুষের ব্যাক্তি স্বাধীনতা। স্বাধীনতা বলতে আমরা কি পেয়েছি? কাগজে কলমে স্বাধীন লিখা আছে বলে আমরা স্বাধীন। প্রশ্নজাগে সত্যই কি আমরা স্বাধীন? যে দেশে বাক স্বাধীনতা নেই, নেই ভোট দেওয়ার অধিকার। সেদেশের মানুষ কি সত্যিই স্বাধীন?

যদিও লিখতে চাচ্ছি আবরার হত্যা নিয়ে। কিন্তু, ভোট দেওয়ার অধিকার হারানোর কথায় বলতে হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা। ভোট দিবে বলে অনেক উচ্ছাস ছিলো মানুষের মনে। সকালে ঘুম থেকে উঠে ভোট কেন্দ্রে যায় মানুষ। স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়েও সেদিন ভোট কেন্দ্রের একশো মিটার দূরেই তাদের পথরোধ করে দাড়ায় দেশমাতার সোনার ছেলেরা। পথরোধ কেন? উত্তর- ভোট হয়ে গেছে, কেন্দ্রে যেতে পারবা না। কিছুই করার ছিল না সেদিন এদেশের মানুষের। কার সাহস আছে এমন সোনার ছেলেদের উপর কথা বলার?

বাংলাদেশের মানুষ হেরে গেছে, সেদিনই হেরে গেছে। দেশের গণতন্ত্র হারিয়েছে। ভোট না দিয়ে সবাই ফিরে যায় বাসায়। প্রধানমন্ত্রীর সোনার ছেলেরা সেদিন প্রতিবেশিকে (বাসা থেকে বেরুলেই যাদের সাথে দেখা হয়) চাপাতি নিয়ে কোপাতে আসে, সেখানে আবরার তো বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী, সিনিয়র কিংবা জুনিয়র মাত্র। আবরারকে হত্যা করার সময় পশুতোষ আচরণ করা স্বাভাবিকই তাদের। দেশকে বিলিয়ে দিচ্ছি দাদাদের চরণে। ক্ষমতায় টিকে থাকার লোভে দেশকে বিক্রি করতে লজ্জা লাগছে না। আর প্রতিবাদ করে আবরার হারালো প্রাণ।

আচ্ছা, এর বিচার কি আবরার পাবে? যেখানে খুনীদের হাতে রয়েছে ক্ষমতা, স্বয়ং দেশমাতা কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষমতা। বিশ্বজিৎ হত্যার ফুটেজ হাতে পাবার পরও সবার সামনে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় খুনীরা। আবরারের খুনীদের বেলায়ও কি এমন হবে? দুঃখের সাথে বলতে হয় যে, সন্তান হত্যার বিচার পেতেও পিতা-মাতাকে দলের ট্যাগ লাগাতে হয়। ৭১ এ দেশ স্বাধীন এর সময় দেশের মানুষ কি এই বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিল? যেখানে থাকবে ক্ষমতার অপব্যবহার, শিক্ষাঙ্গনে থাকবে সন্ত্রাস। এরাই কি বঙ্গবন্ধুর স্বহস্তে গড়া ছাত্রলীগ?

প্রতিটি মায়ের এখন বুকে কম্পন হয় তার সন্তানকে দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠগুলোতে পাঠাতে। কখন যে সংবাদ আসে সন্ত্রাসীদের হাতে তার সন্তান হারিয়েছে প্রাণ, কিংবা তার সন্তানের হাতেই খালি হয়েছে অন্য একজন মায়ের বুক। শিক্ষাঙ্গনে এই সন্ত্রাসের নৈপথ্যে কারা?

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে শিশুতোষ মনোভাবের কোমল ছাত্রদের উপরও হামলা করেছিল এরা। সহপাঠীর প্রাণ যাবে রাস্তায়, আর প্রতিবাদে আসবে ক্ষমতাধারীদের বাধা। ৭১এ পাকিস্তানের সাথে যারা হাত মিলিয়েছিলো তারা ছিল বিংশশতাব্দীর রাজাকার, আর দেশের সাথে বৈঈমানী করাদের একবিংশশতাব্দীর রাজাকার বললে কি আমার অপরাধ হবে? কথা বলতে বাধা, লিখতে গেলে বাধা। কখনো আসে প্রাণনাশের হুমকি, কখনো কেড়ে নেয় প্রাণ। জানতে ইচ্ছে হয়, এটাই কি আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা?

আবরার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার কাছে চাইবো আমি? যেখানে আইন চলে উপরমহলের নির্দেশে। ধিক্কার জানাতে ইচ্ছে হয়, সেইসব মেধাবি নরপিচাশদের। আবরারের বাবা-মা ন্যায়বিচার পাবো কিনা তা জানিনা। তবুও ন্যায়বিচার চাই এবং চাই বন্ধ হোক শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসবাদ।