দুর্নীতিই বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা। আমাদের গোটা জাতি এই চরম দুর্নীতির মধ্যে আকণ্ঠ নিমজ্জিত রয়েছে বিধায় সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এর মারাত্মক বিস্তার ও নেতিবাচক প্রভাব বুঝতে পারছি না। কিন্তু এই মারাত্মক ক্যান্সার সারা জাতি ও সমাজকে কিভাবে কুরে কুরে খেয়ে ফেলছে তা এক সময় আমরা ঠিকই বুজতে পারবো, হয়তো তখন দেরি হয়ে যাবে অনেক। আমরা জাতি হিসেবে আসলেই চরম হিপোক্রেট। বাংলাদেশে কেউ জনগণের পয়সা লুট করলে, দুর্নীতি করে সীমাহীন অর্থ উপার্জন করলে তার স্ত্রীরাও তাকে ভগবানের চোখে দেখে। এদের চোখে মদ খাওয়া হারাম হলেও অন্যের হক মেরে দুর্নীতি ও লুটপাট করা মোটেও হারাম নয়। রমজানের সময় সিন্ডিকেট করে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়া বা কুরবানীর চামড়ার দাম পানির মূল্যে নামিয়ে ফেলাটাও জাতির কাছে হারাম নয়। এক অর্থে দেশের অধিকাংশ জনগণেরই কোনো প্রকৃত নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধই নেই।
এই দুর্নীতির মাধ্যমে সহজে রাতারাতি বড়োলোক হওয়ার স্বপ্ন থেকেই সবাই এখন রাজনৈতিক শক্তি বা বলয়ের মধ্যে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। সুতরাং সুযোগসন্ধানী রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ী চক্রের কাছে আওয়ামী, বিএনপি, জামাত, জাপা বা বামপন্থী কোনো আদর্শই এখানে আর মূখ্য থাকে না। যখন যে দল ক্ষমতায় যায়, দ্রুত পোশাক পাল্টে সেই দলের ছত্রছায়ায় গিয়ে এরা লুটপাট, দুর্নীতি ও ক্ষমতার চরম অপব্যবহারে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এদের কাছে দেশ-আদর্শ-ধর্ম সবই হচ্ছে লোক দেখানো, তার নিজের আখের গোছানোর হাতিয়ার। দেশকে সত্যি ভালোবাসলে কেউ দুর্নীতি, প্রতারণা, দেশের সম্পদ লুটপাট করে অন্য দেশে পাড়ি দেয়া, পাচার করা ও জনগণকে নিপীড়ন করতে পারতো না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বলয় ও এর মাধ্যমে হালুয়ারুটি অর্জনের সুযোগ সুযোগ এতই শক্তিশালী যে বাঙালিরা প্রবাসে গিয়েও দেশের রাজনৈতিক শক্তির সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য মরিয়া হয়ে পড়ে, যার প্রভাব আমরা দেখতে পাই কিছু সংখ্যক প্রবাসীদের মধ্যেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলীয় পরিচয় তুলে ধরার প্রাণান্তর প্রচেষ্টা - অনেকটা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতোই।
দুর্নীতি ও লুটপাট বন্ধ না করতে পারলে এই ক্যাসিনো ফ্যাসিনো বন্ধ করে কোনোই লাভ হবে না। সমস্যাতো ক্যাসিনো নয় সমস্যা হচ্ছে টপ টু বটম লেভেলে সীমাহীন দুর্নীতি। দেশের সংখ্যা গরিষ্ট দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রাপ্য সম্পদটুকু একশ্রেণীর আমলা/রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী চক্র লুটপাট করে সেই টাকায় মদ, পতিতা ও জুয়াতে নিমগ্ন থাকে। শামীম ওসমান ও তার পরিবার নারায়ণগঞ্জের পতিতালয়গুলো বন্ধ করে দিয়েছিলো - তার পরবর্তী ফলাফল কি হয়েছিল তা অনেকেই জানেন - ওই সকল পতিতারা সমাজের যত্রতত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। আর জনগণের কাছে প্রচুর অবৈধ অর্থ থাকায় পতিতালয়ের পরিবর্তে শহরের আনাচে কানাচে ফ্ল্যাট ও এপার্টমেন্টে গিয়ে আমোদ ফুর্তি করতে কারো কোনো সমস্যা হয় নাই। অবৈধ উপার্জনের উৎস বন্ধ না করতে পারলে এই ক্যাসিনো/ফ্যাসিনো, পতিতাবৃত্তি বন্ধ করে কোনোই লাভ হবে না। অবৈধ উপার্জনের অর্থ উড়ানোর জন্য পাবলিক ঠিকই অন্য কোনো ধরণের আমোদ ফুর্তি করার পথ বের করে ফেরবে।
মনে হচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এখন মনস্থির করে ফেলেছেন তিনি জুয়ার বিরুদ্ধে জিহাদ করবেন যাতে সমাজে অনৈতিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে জুয়া ও অন্যান্য অসামাজিক কার্যক্রমের মূল কারণ যে অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ, তার উৎস ও সুযোগ বন্ধ করার জন্য যদি তিনি কঠোর পদক্ষেপ নিতেন তবে তা আরো বেশি ফলপ্রসূ হতো। আশা করি তার এজেন্ডাতে দুর্নীতির মতো মারাত্মক সংক্রামক সামাজিক ব্যাধিটি প্রাধিকার পাবে। আর তা না হলে তার এই ক্যাসিনো বিপ্লব স্বল্পস্থায়ী একটি লোকদেখানো কর্মসূচিতে পরিণত হবে।