21 September 2019

মেগা প্রজেক্ট, মেগা দুর্নিতি

এই আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই দেশের সবচেয়ে বড় বড় মেগা প্রজেক্ট গুলি হাতে নেওয়া হয়। সেজন্য সরকার বাহবা পাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু বাস্তবতা আমাদের বাহবা দেওয়ার সাহস দেয়না। কারণ, মেগা প্রজেক্ট গুলোর সাথে সাথে দেশে চালু হয়েছে মেগা দুর্নিতি। মেগা প্রজেক্ট গুলোর বাজেট থাকে প্রয়োজনের প্রায় দ্বিগুণ-তিনগুণ! ফলশ্রুতিতে এসব মেগা প্রজেক্টে হরিলুট হয় সবচেয়ে বেশি। হরিলুটের হিসেব মিলাতে গিয়ে ঘাম ছুটে যায় এর সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের। তারা হিসেব মিলাতে না পেরে একটি পর্দার দাম ৩৭ লক্ষ কিংবা একটি টিনের দাম ১ লক্ষ টাকা দেখাতে হয়। এতো বড় আকারের দুর্নিতির কথা আগে কখনো শোনা যায়নি।

প্রজেক্ট কর্মকর্তাদের এমন হরিলুট করার সুযোগ হচ্ছে এর সাথে সাধারণ জনগণের সম্পৃক্ততা না থাকার কারণে। এসব প্রজেক্টে যদি সাধারণ মানুষের ইনভেস্টমেন্ট থাকত তাহলে এমন হরিলুটের পরিমাণ অনেক কমে আসতো। কেননা আপনি যদি কোন প্রজেক্টে লাভের আশায় ইনভেস্টমেন্ট করেন তাহলে আপনি উক্ত প্রজেক্ট সম্পর্কে জানতে চাইবেন এবং ঐ প্রজেক্টের সাথে জড়িত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা আপনাকে অনেক কিছুই জানাতে বাধ্য থাকবে। আপনি প্রোজেক্টের জন্য দরকারি জিনিস পত্রের ক্রয়াদেশ দেখতেন, ক্রয়াদেশে এমন ধরনের গরমিল দেখলে আপনি প্রশ্ন করতেন, যথাসম্ভব বাধা দেওয়ার চেষ্টা করতেন, বাহিরে এসে আলাপ করতেন। এসব ঘটার ফলে প্রজেক্ট কর্মকর্তারা সাবধানে থাকতেন এবং সাধারণ মানুষের কাছে জবাবদিহিতার যে নামমাত্র ব্যাপার আছে সেটার বাস্তবিক রূপ দেখা সম্ভব হতো।

আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের অদক্ষতা ও অপরিপক্কতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে সরকারের আমলারা জনগণের সম্পদের অপচয় করছে ও অনৈতিক সম্পদের পাহাড় গড়ে যাচ্ছে! এছাড়াও দুর্বল নির্বাচন কমিশন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অভাব বা চাটুকারিতা, আমলাদের ব্যাপারে বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা হ্রাস কিংবা দুর্বল দুর্নীতি কমিশনের কারনে আমলাদের প্রভাব অতিমাত্রায় প্রভাব বিস্তার করছে। একটা দেশের জন্য এগুলো সুষ্ঠু আমলাতন্ত্র ও রাজনৈতিক অবস্থান নয়।

দেশের উন্নয়নে জনগণের অংশগ্রহণ কথাটি প্রচলিত থাকলেও উন্নয়ন প্রকল্পে জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ নেই। সরকার যদি জনগণের সরাসরি অংশগ্রহনের পথ সহজ করে দেয়, তাহলে সরকারি আমলাদের জন্য দুর্নীতি করাটা বেশ দুরূহ হয়ে পড়বে। বড় বড় প্রকল্প গুলিতে সরকার যে মনোপলি ব্যবসায়ের অদৃশ্য সিস্টেম চালু করে রেখেছে তাতে দুর্নীতি রোধ করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। সরকার অর্থাৎ শেখ হাসিনা যদি সত্যিকার অর্থে দুর্নীতি দমন করতে চায়, তাহলে এই জায়গাতে তাকে অবশ্যই আঘাত করতে হবে। বড় বড় সরকারি প্রকল্পগুলিতে সাধারণ জনগণের সত্যিকারের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে, সরকারি কর্মকর্তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করার প্রক্রিয়া আরো সহজ করতে হবে। এতে তারা তাদের কাজের ব্যাপারে স্বচ্ছতা প্রদর্শনে আরো বেশি তৎপর হবে।