মাত্র এক যুগ আগের স্মৃতিচারণ করে বলতে পারি তখন এলাকার সর্বোচ্চ গরুর দাম ছিলো ২০ হাজার টাকা। কিন্তু চামড়া ই বিক্রী করতো দুই হাজার টাকা দিয়ে,সেইবার এক ঈদে চামড়া নিয়ে তো তুলকালাম! এতিম খানার হুজুর আর ব্যবসায়ীদের লাইন! কোন রকমে পনেরশ টাকা না হলে বিক্রী করুম না! দিনশেষে গোস্ত কাটাকুটি এবং রান্না হওয়ার পর হাড্ডি চিবুতে চিবুতে খেয়াল করলাম এক এতিম খানার হুজুর টাকা এক হাজার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তাকে গোস্ত রুটি খাওয়ায়া ধৈর্যের ফলস্বরূপ চামড়াটা এক হাজার টাকায় বিক্রী করে সে টাকা এলাকার গরীব দুখীদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া একটা আনন্দের ছিলো!
ইদানিং খেয়াল করলাম দুনিয়ার সবকিছুর দাম বড়লো কিন্তু চামড়ার দাম কমে গেলো! কেউ বলছেন সিন্ডিকেট, কেউবা বলছেন খতিয়ে দেখতে হবে! লাখ টাকার গরুর চামড়া কিনতে কেউ আসেনি এমন দাবীও দেখলাম! গরুর চামড়া ৫০ আর ছাগলের চামড়া ১০ টাকা বিক্রী হওয়ার নিউজ দেখলাম সময় টিভিতে তবে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা ভালো তাজা চামড়ার দাম ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বিক্রী হয়েছে! একটা চামড়ার যে ওজন আলগিয়ে ঠেলা গাড়িতে যে উঠিয়ে দেয় তাকেও তো ২০ টাকা বকশিশ দেওয়া লাগে!
গাড়ি, তেল, মজুরি, লবন সব মিলিয়ে চামড়ার দামের চেয়ে অন্যান্য খরচ বেশী পড়ে যাওয়ায় অনেকে চামড়া রাস্তায় ফেলে দিয়ে চলে গেছেন! চট্টগ্রাম মুরাদপুর থেকে শুরু করে অক্সিজেন রোড জ্যাম ছিলো খালি ফেলে দেওয়া চামড়া সরানোর জন্য, অনেক জায়গায় শতশত চামড়া মাটিতে পুতে ফেলা হয়েছে! পাট শিল্পের মতো চামড়া শিল্পও বিলুপ্তির পথে মনে হচ্ছে, কেউ বলছে ট্যানারির দোষ কেউবা মনিটরিংয়ের!
কোরবানির গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিলো কিন্তু দিনশেষে সেগুলো কেবলি পরিবেশ দূষণের হাতিয়ার হলো, গতবছর তা ছিলো প্রতি বর্গফুটে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়! দশ টাকা কমিয়ে এনেও কোন লাভ হলো না! আরো একটা বেপার হলো গত বছরের চামড়ার ৪০ শতাংশ অবিক্রীত! চামড়ার সাথে সংশ্লিষ্টদের বেতন দেওয়া ই দায়! কেকা ফেরদৈসী চাইলে গরুর চামড়া দিয়ে মচমচে বুনা টাইপ কোন রেসিপি এনে হারানো গৌরব ফিরে পেতে পারতো। এক যুগ আগে যে চামড়ার দাম ২,০০০ টাকা ছিলো যেটা তো আজ ১০,০০০ টাকা হওয়ার কথা ছিলো! কোথাও যেনো একটা ঘাপলা আছে! বেপারাটা মাথায় আসছে না!