প্রিয়া সাহা এবং হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ অতি চালাক। এরা গাছেরটাও খায় তলারটাও কুড়ায়। বাংলাদেশে এত সুযোগ সুবিধা পাওয়া সত্ত্বেও এরা দেশের বদনাম করতে ছাড়ে না। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি রানা দাশগুপ্ত প্রিয়া সাহার বক্তব্যের সমর্থনে ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর থেকে এ পর্যন্ত হিন্দুদের বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলেছেন। তিনি এও বলেছেন যে ১৯৪৭ সালে এ দেশে মোট জনসংখ্যার ২৯% ছিল হিন্দু, যা এখন মাত্র ৯%। পরে বলেছেন ২% বেড়ে এটা এখন ১১% হয়েছে। কিন্তু তিনি ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ কোথায় পেলেন আমি বুঝতে পারছি না। তার হিসাবের শুভঙ্করের ফাঁকি আমরা ধরতে পারবো না বলে তিনি ধরে নিয়েছেন।
দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগের পর ১৯৪৭ সাল থেকে পাকিস্তানের বহু হিন্দু ভারতে চলে যায় এবং ভারতের বহু মুসলমান পাকিস্তানে চলে আসে। ১৯৬৪ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং ১৯৬৫ সালের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের পর দেশ ত্যাগের এই প্রবণতা গতি পায়। কিন্তু তখন বাংলাদেশ নামের কোন দেশই ছিল না। সবচেয়ে বেশি দেশত্যাগের ঘটনা ঘটে পাকিস্তানের ঐ ২৩ বছরের মধ্যে। ভারত থেকে মুসলমানদেরও বেশি দেশত্যাগের ঘটনা ঘটে ঐ ২৩ বছরে। রানা দাশগুপ্তের ঐ হিসাব যদি আমরা বিনা তর্কে মেনেও নিই, তাহলেও বেশির ভাগ দেশ ত্যাগের ঘটনা ঘটেছে আমাদের স্বাধীনতার আগে। এর পরেও যে দেশ ত্যাগ ঘটেনি এমন নয়, কিন্তু তা খুবই কম এবং সেগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
দেশ ত্যাগের এই ঘটনাগুলো শুধু হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের কারণে নয়, এর সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণও রয়েছে। তবে কোন অবস্থাতেই সংখ্যা গরিষ্ঠ সম্প্রদায় কর্তৃক সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের ঘটনা সমর্থনযোগ্য নয়, তা সে বাংলাদেশেই হোক বা ভারতেই হোক। মনে রাখা উচিৎ ভারতে মুসলমানদের বাবরি মসজিদ সহ অসংখ্য মসজিদ হিন্দুরা ভেঙ্গে দিয়েছে এবং এখনও দিচ্ছে, মুসলমানদের হত্যা করছে, জোরপূর্বক জয় শ্রীরাম বলতে বাধ্য করছে। পাশাপাশি বাংলাদেশে হিন্দুদের অবস্থা দেখুন। এখানে তারা ভারতের মুসলমানদের তুলনায় অনেক ভালো অবস্থায় আছে। তাই প্রিয়া সাহা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে হাত মিলিয়ে করুন সুরে যে তিন কোটি সত্তর লাখ সংখ্যালঘুর বাংলাদেশ থেকে উধাও হয়ে যাওয়ার কাহিনী বয়ান করেছে, তা সর্বৈব মিথ্যা, বানোয়াট ও রাষ্ট্রদোহীতার শামীল।
আর একটা কথা। সংখ্যা লঘুদের মধ্যে বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরাও পড়ে। তাদের মধ্যে কে কবে দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে গেছে অন্তত আমি জানি না। আপনারাও কেউ জানেন বলে মনে হয় না। অথচ প্রিয়া সাহার এই মিথ্যা অভিযোগের ব্যাপারে তাদের মধ্যে কেউ এ পর্যন্ত একটাও প্রতিবাদ জানায়নি। সম্ভবত তাদের ঐক্য পরিষদে সংখ্যা গরিষ্ঠ হিন্দুদের চোখ রাঙানিতে এই দুই সম্প্রদায়ের লোকেরা চুপচাপ আছে। সত্যিই দুঃখজনক।