21 July 2019

ছেলেধরা নামক আজব গুজবে পুড়ছে দেশ

মানুষের কী হল? কী হয়ে গেল আমাদের এই সমাজ, এই দেশটার? কী ভয়ানক অরাজকতায় ছেয়ে যাচ্ছে সমাজ-সংসার? ভয়ঙ্কর সব হত্যাযজ্ঞের নৃশংসতা প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে প্রায় প্রতিটি দিন! ছেলেধরা কল্লাকাটার কি এক গুজব ছড়িয়ে দেয়া হল আকাশে বাতাসে! আর অমনি দেশজুড়ে বিবেক বিবেচনাহীন কিছু দ্বিপায়ী প্রাণী একের পর এক নিরীহ নিরপরাধ মানুষদের পিটিয়ে মারার মচ্ছবে মেতে উঠলো। নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই আতঙ্কিত। সামান্য মানসিক ভারসাম্যহীন যে কারও জীবন এখন মারাত্মক শঙ্কার মুখে। সারা দেশে তৎপর হত্যাকারী এই নরশার্দুলরা। এরা পিটিয়ে মানুষ খুন করে উল্লসিত হয়। আমোদিত আহ্লাদিত বোধ করে।

অতি উতসাহী এই নির্বোধ দায়িত্বহীন শ্রেনিটির হাতে কোনো একজন সাধারণ নাগরিকের জীবনও এখন আর নিরাপদ নয়। কার, কখন এবং কোথায় যে জীবন প্রদীপ এদের হাতে নিভে যাবে কেউ জানে না। এই অপরিণামদর্শী শ্রেনিটির সম্মিলিত হামলার নাম কোনোভাবেই গণধোলাই বা গণপিটুনি বলা উচিত নয়। বড়জোর, দুষ্কৃতকারীদের লাঠিপেটা বলা যেতে পারে তাদের এসব জঘন্যতম খুনখারাবির ঘটনাগুলোকে। এদেরকে সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করে জনগন আখ্যায়িত করেন। বলি, এদের জনতা বলা হলে, দুষ্কৃতকারী, খুনি বলা যাবে কাকে? যারা প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে মানুষ খুন করতে পারে তারা আর যা-ই হোক সুস্থ স্বাভাবিক কোনো মানুষ নন। এদের জন্য শুধু করুনাই হয়। এদের সীমাহীন নৃশংসতা হৃদয়ে শুধু রক্তক্ষরণই ঘটায়।

দেশের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন স্থানে গত কয়েক দিনে এই শ্রেনিটির দ্বারা বেশ কিছু খুনের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি খুনই বেদনাদায়ক। প্রতিটি হত্যার ঘটনাই আমাদেন আহত করে। কিন্তু গত ১৯ জুলাই শনিবার রাজধানী বাড্ডার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তাসলিমা নাম্নী নারীকে হত্যার ঘটনাটি ব্যাথিত করে! কেন জানি বারবার নিজিকে অপরাধীর কাতারে নিয়ে দাড় করিয়ে দেয়। কেন এই খুনিদের আমরা রুখতে পারলাম না! এই খুনিচক্রের ভেতরে মানবতাবাদের বীজ আমরা কেন বপন করতে পারলাম না!

তাসলিমার ১১ এবং ৪ বছরের ছোট ছোট দুই সন্তান রয়েছে। তাদের একজনের স্কুলে ভর্তির বিষয়ে জানতে তিনি গিয়েছিলেন সেখানে। এই দুই শিশু আজ মা হারা। ইয়াতিম। খুশির সংবাদ, এই ঘটনায় ইতোমধ্যে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। অবুঝ এই শিশুদের মাথার উপর থেকে মাতৃছায়াকে যারা চির দিনের জন্য সরিয়ে দিলেন তাদের বিচারের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করার সুযোগ কি এদেশের মানুষের কখনো হবে? না কি বিশ্বজিৎ, সাগর রুনিসহ অসংখ্য খুনের বিচারের দীর্ঘসুত্রিতার মত এই নৃশংস খুনের ঘটনাও ধামাচাপা দেয়ার প্রচেষ্টা হবে?

কথা হচ্ছে, অচেনা কাউকে দেখলেই, তার কথাবার্তা সন্দেহজনক মনে হলে, তার আচরণ অসংলগ্ন মনে হলে, তাকে আইন আদালতের কাছে সোপর্দ করুন। নিকটস্থ থানা পুলিশের সহায়তা নিয়ে তাদের নিকট হস্তান্তর করুন তাকে। কিন্তু প্রশ্ন হল, তাকে মেরে ফেলতে হবে কেন? জলজ্যান্ত একটি মানুষকে পিটিয়ে মারতে হবে কেন? এই আইন হাতে তুলে নেয়ার মত ধৃষ্টতা কেন? এসব যারা করছেন তাদেন সাধ্যমত প্রতিহত করুন। সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করুন। মনে রাখতে হবে, অপরাধী ধরা পরলেই তাকে মারার অধিকার আপনাকে আমাকে কেউ দেয়নি। তার বিচারের দায়িত্ব আদালতের। দেশের প্রচলিত আইনে তার সর্বোচ্চ শাস্তি যাতে নিশ্চিত হতে পারে, সেটাই প্রত্যাশা।