ছোট বাচ্চার প্রতি স্নেহ, মায়ার বদলে যৌন আকর্ষণ অনুভব করাটা ভয়ানক মানসিক সমস্যা, বেশ বড় রোগ। বাংলাদেশে কমপক্ষে শতকরা ১৫ ভাগ মানুষের মানসিক সমস্যা আছে। শতকরা এই ১৫ ভাগের একটা অংশ অস্বাভাবিক যৌন আকর্ষনে ভুগতে পারে। ফলে, সমাজে অস্বাভাবিক যৌন আকর্ষনের সমস্যা বিরাজ করছে। দেশের বর্তমান বিশৃংখল প্রশাসন ও বিদ্যমান সামাজিক সমস্যা এটাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। এটার সমাধান বের করার জন্য নতুন করে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়ার দরকার, এই সমস্যা নিজের থেকে কমবে না। দেশের বর্তমান অর্থনীতি, প্রশাসনিক ব্যবস্হা, অস্বাভাবিক নগরায়ন, বস্তি ধরণের আবাসিক এলাকার বিস্তার, টোকাই সমস্যা, ব্যস্ত মা-বাবা, চাকর চাকরাণীর হাতে শিশুর ভার, ভাসমান ধরণের প্রতিবেশী, শিশুদের জন্য অস্হিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি করছে।
ঢাকায়, ৭ বছরের শিশুটির উপর হত্যাকারীর যৌন আকর্ষণের নজর পড়েছিল কিছু সময় ধরে। সেটা কেহ লক্ষ্য করেনি, এবং হত্যাকারী নিজেও বুঝতে পারেনি যে, কি ভয়ংকর অস্বাভাবিক যৌন তাড়না তাকে মৃত্যুর দিকে টানছে। লোকটার চেহারা, বেশভুষা থেকে অনুমান করা সম্ভব যে, সে শিক্ষিত নয়, দরিদ্র, সঠিকভাবে মানুষ হওয়ার সুযোগ পায়নি। তার জীবন যদি সুন্দর না হয়ে থাকে, সমাজ তার থেকে কি কি সুন্দর অবদান আশা করতে পারে? সমাজ কি আগে কখনো তাকে নিয়ে ভেবেছিলো, তাকে কেহ চিনতো, সে কি করছে, তা নিয়ে কারো মাথা ব্যথা ছিলো? এখন সে যখন ভয়ংকর অপরাধ করেছে, সমাজ তাকে দেখছে, চিনতে পারছে, এখন সবাই তার বাবার নাম জানে। সবাই জানে যে, সে জীবনে সামজ থেকে হয়তো ভালো কিছুই পায়নি। তবে, সামজ থেকে সে এখন একটা বড় জিনিষ পাবে।
কয়েক লাখ টোকাই সারা দেশে ছড়ায়ে ছিটিয়ে আছে; এদের মাঝে যাদের বয়স ১২ বছরের বেশী, যারা রাস্তাঘাটে, ষ্টেশনে, লন্চঘাটে রাত কাটাচ্ছে, তাদের একাংশ কি ১০/১২ বছরের টোকাই মেয়ের সাথে ঘুমাচ্ছে না? এই স্বল্প বয়সে অস্বাভাবিক যৌন মিলনের ফলে, কেহ প্রাণ হারায়নি, কেহ যৌন রোগে ভুগছে না? এই সম্পর্কে কেহ কিছু বলছে, কেহ হা-হুতাশ করছে? এগুলো কি আজকের নতুন ঘটনা, এগুলো কি জাতির ভিত্তিতে হানা দেয়ার কথা নয়? মনে হয়, এগুলো এখন জাতির নার্ভে এসে পৌঁচেছে! বস্তির মায়েরা যখন ৮/১০/১১ বছরের মেয়েকে তথাকথিত ঘরে রেখে ইট টানতে, বালু টানতে, বাসায় কাজ করতে যাচ্ছে, এসব মেয়েদের কেহ কি অপ্রয়োজনীয় ভয়ংকর আদর করছে না? অবশ্যই করছে, এবং পুরো জাতি সেটা জানে; এমন কি এসব বাচ্চাদের মায়েরাও জানে!
৭ বছরের বাচ্চাটাকে যেই লোক হত্যা করেছে, তাকে যদি ক্রস ফায়ারে না দিয়ে, সঠিকভাবে বিচার করে, ও মৃত্যুদন্ড দেয়, ওকে ঝুলানো অবধি সরকারের আধা-কোটী টাকা খরচ হবে এই লোকের পেছনে। কিন্তু সরকার যদি ওকে ১০ বছর বয়সে জানতো, চিনতো, ওর পড়ালেখা, স্বাভাবিক জীবন গঠনের জন্য সাইফুর রহমান, বা মুহিত কি আধা-লাখ টাকা খরচ করতো? কখনো করতো না। যেখানে খরচ করার দরকার, সেখানে খরচ না করলে, সমাজকে একদিন তার জন্য ক্ষতিপুরণ দিতে হবে; সেই একদিনটা এখন এসেছে দ্বারে!