20 March 2018

উন্নয়নশীল দেশের কাতারে বাংলাদেশঃ মানুষের ভাগ্যের কি কোন পরিবর্তন হবে?

উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার প্রাথমিক স্বীকৃতি পেয়ে গেছে বাংলাদেশ। গেলো শুক্রবার, ১৬ মার্চ, জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) এর সচিবালয়ের প্রধান রোনাল্ড মোলেরাস বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার প্রাথমিক স্বীকৃতি জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেনের কাছে হস্তান্তর করেন। তবে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে ২০২৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে। এই সময়ে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবেই পরিচিত হবো। আর এই সময়ে আমাদেরকে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আগাতে হবে।

এদিকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার কারণে আমাদের সামনে কয়েকটি চ্যালেঞ্জ চলে আসবে। বড় ধরণের বাঁধা আসবে আমাদের রপ্তানি খাতে। আমরা গার্মেন্টস সহ অন্যান্য পণ্যের রপ্তানির ক্ষেত্রে ইউরোপ ও আমেরিকায় শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা হারাবো। কিংবা, আমাদেরকে নতুন শর্তে বাজার সুবিধা আদায়ের জন্য নতুন করে আবেদন করতে হবে। আমাদেরকে আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো আরো কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। যেখানে আমরা অনেকটাই শিথিল মনোভাব দেখিয়ে থাকি সেখানে আরে এমন চলবেনা।

ওষুধ শিল্পে আমরা বড় ধরণের ধাক্কা খাবো। এখন যে একচেটিয়া সুবিধা পাচ্ছি সেটা থাকবে না। বছরে ১৫ লাখ করে ক্যান্সার রুগী আর ২ কোটি কিডনী রোগীর এই দেশে ওষুধের দাম মানুষের হাতের নাগালের বাইরে থেকে আকাশ দূরত্বে চলে যাবে। কারণ আমাদেরকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে কোন প্যাটেন্ট রয়ালিটি না দিতে হলেও ২০২৪ সালের পর উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে দিতে হবে। এদিকে ঋণের সুদও বেড়ে যাবে। এখন যেখানে ১ শতাংশেরও কম সুদে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো থেকে ঋণ পাওয়া যায় সেটা কয়েকগুণ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। আবার পরিশোধের এখন মেয়াদ যেখানে ৪০ বছর পর্যন্ত হয় সেটা কমে ১০/২০ বছর হয়ে যাবে।

সমস্যায় পড়বে এনজিও খাত। বাংলাদেশের এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে মানুষ থাকে কিন্তু মানুষের কাছে সরকারি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা পৌছায় না। সেই সব জায়গায় থাকা মানুষদের জন্য এনজিওদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কর্মসূচি হলো বিরাট আর্শিবাদ। আবার বড় বড় শহরের মধ্যে থাকা বস্তিবাসীদের জন্যও এনজিও গুলো হলো অনেক বড় আর্শিবাদ। এনজিওদের কার্যক্রম চলে দাতা সংস্থার অর্থায়নে। উন্নয়নশীল দেশ হয়ে যাওয়ার কারণে আমাদেরকে আর দাতা সংস্থাগুলো অর্থ দেবে না। তারা তখন বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে চলে যাবে।

উন্নয়নশীল নাকি উন্নত হলো দেশ তাতে কি আসে যায় শিক্ষিত ১ কোটি বেকার মানুষের কিংবা আধাপেটে থাকা কৃষক কিংবা বস্তিবাসী কোটি মানুষের? তারা আর কিছু নয়, তারা চায় তিনবেলা পেট ভরে খেতে, অসুখে বিসুখে চিকিৎসা পেতে, আর কাজ করার মতো শিক্ষা ও জ্ঞান পেতে। এবং অবশ্যই কাজ পেতে চায় প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। বেকারত্বের জ্বালা সেই বোঝে যে বেকার। শিক্ষিত বেকারের সমস্যা আরো বেশি।