05 February 2016

স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদের পরিসংখ্যান এবং বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে রাস্ট্রদ্রোহ মামলা

আওয়ামী স্বৈরাচার সরকারের উদ্দেশ্যই যখন বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের শায়েস্তা করা, নির্মূল করা - সেখানে বিএনপি'র রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা-হামলা, জেল জুলুম, ইত্যাদি নিতান্তই পান্তাভাত। তাই বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাবাজ সরকারের আরো একটা 'রাস্ট্রদ্রোহ মামলা' করা নিয়ে আমরা বিন্দুমাত্র বিচলিত হই না। বরং এই মামলা হতে পারে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সঠিক পরিসংখ্যান লিপিবদ্ধ করার একটা মাইল ফলক। এই মামলাই খোলে দিতে পারে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মত্যাগকারী শহীদদের তালিকা তৈরি করার দ্বার।

তবে বিচার বিভাগে খায়রুল-মানিকদের মত দূর্বৃত্বদের প্রেতাত্মা এখনও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ওরাই এখনও স্বৈরাচার সরকারের গৃহভৃত্য হিসেবে আকাম কুকাম করে চলেছে। সেখান থেকে এমন ভালো কিছু আশা করা অবশ্য সঠিক নয়। তারপরেও যদি কোনো বিচারক বিবেকের তাড়নায় মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদদের সঠিক তালিকা প্রণয়নের নির্দেশ দেয় - সেটাই হবে ইতিহাসের জঞ্জাল মুক্তির একমাত্র সোপান। বেগম জিয়া বলেছিলেন, “মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়েও বিতর্ক হচ্ছে।” কিন্তু তিনি মোটেই বলেননি স্বাধীনতা যুদ্ধে শহেদের সংখ্যা কম কিংবা বেশী। তারপরেও স্বৈরাচার সরকার তাঁর বিরুদ্ধে রাস্ট্রদ্রোহ মামলা করেছে।

আমি বিশ্বাস করি সংখ্যাতত্বে শহীদদের মর্যাদা বাড়েনা কিংবা কমেনা। যেমন, বৃটিশ ভারতে স্বাধীনতাকামী একজন তিতুমীর, মাস্টারদা সূর্য্যসেন, প্রীতিলতা, ক্ষুদিরাম বসু, প্রফুল্ল চাকী, বিনয়-বাদল-দীনেশ, ভগত সিংদের আমরা শ্রদ্ধাভরে শ্মরণ করি, আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতাকামী একজন ববি স্যান্ড সকল স্বাধীনতাকামীদের অন্তরজুড়ে আছেন আর বিপ্লবী চে গুয়েভারা তো আজও সকল তুনুনের আদর্শ হয়ে আমাদেরকে উজ্জিবীত করছেন। সেখানে কেন আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ শহীদানের নাম ঠিকানা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকবেনা?

শহীদদের তালিকা করা মোটেই কঠিন কাজ নয়। আমি যেমন বলতে পারি - আমি যে এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ করেছি সেই থানা এবং প্রতিবেশী আরো দুইটি থানায় স্বাধীনতা যুদ্ধে কতজন শহীদ হয়েছিলেন তেমনি দেশের ৬৫ হাজার গ্রামের অনেক সিনিয়র সিটিজেনই বলতে পারবেন তাঁদের নিজ নিজ এলাকায় কে কোথায় শহীদ হয়েছিলেন। একান্তই যদি সরকার আমজনতার উপর ভরসা করতে না পারে তাহলে বর্তমান সরকারের অন্ধঅনুগত, একান্ত বাধ্যগত বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মাধ্যমেই এই কাজটা করা যেতে পারে। কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল যদি দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটকে নির্দেশ দেয় নিজ নিজ এলাকার শহীদদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে পাঠানোর জন্য সেটা করতেও এক মাসের বেশী সময় লাগবেনা। এমনতো হতে পারে সেই তালিকায় শহীদের সংখ্যা আরো কয়েকগুন বেশী হতে পারে! তবুও আমরা চাই মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা, শহীদ বুদ্ধিজিবীদের তালিকার মত মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদানের তালিকা হোক। এমনকি স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকা করে তাঁদের যথযথ বিচার করা হোক।

জীবিত মুক্তিযোদ্ধাগন মাসিক ভাতা পাচ্ছেন, যেসব মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যু বরণ করেছেন তাঁদের উত্তরসূরীরাও ভাতা পাচ্ছেন - যা অত্যন্ত সম্মানের। আমরা আশা করবো স্বাধীনতা যুদ্ধে সকল শহীদানের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে তাঁদের পরিবার পরিজনকেও সম্মানী দেওয়া হোক।