বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল গরীব মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, রিকশাচালক, ভ্যানচালক এবং এ জাতীয় শ্রমিকদের জীবনে তেমন একটা পরিবর্তন আসেনি। একজন রিকশাচালক দেখাতে পারবেন না, যিনি রিকশা চালাতে চালাতে কোটিপতি হয়ে গেছেন কিংবা রিকশাচালক থেকে বড় শিল্পপতি হয়েছেন। অথচ ব্যাংক লুট করে, ঘুষ খেয়ে, সুদ খেয়ে, টেন্ডারবাজি করে, চোরাকারবারি করে বহু শিক্ষিত লোক এদেশে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। একজন রিকশাওয়ালা ঢাকা শহরে যানজটের জন্য আংশিক দায়ী হলেও তার দারিদ্র্যের জন্য আমরা দায়ী।
আমাদের রাজনীতিবিদ, আমলা, পুলিশ, আর্মি, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক সবাই দায়ী। আমরা তাঁদের মুক্তির পথ বের করে দিতে পারিনি। একটা দুর্নীতিগ্রস্ত পুঁজিবাদী সমাজ বৈষম্যমুক্ত হতে পারবেনা জীবনেও। আমরা সবাই শুধু নিজের সুবিধা বাড়াচ্ছি। কেউ ছাড় দিচ্ছিনা। শুধু নিজের সুবিধাই আমরা ভাবছি। ঢাকার মেয়র, পুলিশ কমিশনার, ঢাকার এমপিরা, ঢাকার হাজার কিংবা শত কোটি টাকার মালিকগণের উচিত রিকশাওয়ালাদের মত গরীব মানুষের কষ্ট লাঘব করার জন্য কাল সকাল থেকেই সচেষ্ট হওয়া। গরীব মানুষের কান্নার অভিশাপ মারাত্মক। এরা বদদোয়া দিলে ধ্বংস আসন্ন।
লকডাউন কি শুধু এই রিকশাওয়ালাদের জন্য? রাস্তায় দেখা যায় এক মোটরসাইকেলে ২/৩ জন ছেলে-মেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে শুধু বাতাস খাওয়ার জন্য। বড়লোকের ছেলে-মেয়েরা জোরে জোরে গাড়ি চালাচ্ছে। একটা প্রাইভেটকার উল্টে রাখা হয়েছে এমন কোনো দৃশ্য আজ পর্যন্ত কোন পত্রিকায় দেখলাম না। রিকশাওয়ালার চেহারার দিকে তাকালে কি আমাদের একটুও অনুতাপ হয় না? কত দূর থেকে এরা আসে এই শহরে? কত কষ্ট করে থাকে। কী খায়? আমরা কোনদিন জিজ্ঞেস করিনা। পুলিশও অনেক পরিশ্রম করে সারাদিন। পুলিশের পক্ষেও আমরা লিখি।
বাংলাদেশ পুলিশ ইচ্ছে করলেই কাল থেকে মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। মেয়রগণ করতে পারেন। ইফতারের সময় পুলিশ থেকে রিকশাওয়ালাদের ইফতার করাতে পারেন। শরবত খাওয়াতে পারেন। রিকশা উল্টে দেয়ার অপসংস্কৃতি বন্ধ হোক। রিকশার চালকদের আর্থিক জরিমানা করা বন্ধ হোক। রিকশাওয়ালাদের অন্য কোনো কাজে পুনর্বাসনকল্পে দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প নিক সরকার। গরীব মানুষ যদি স্বাধীনতার মজা না পায় তাহলে এই স্বাধীনতা ব্যর্থ।
