12 November 2020

৭১ টিভি কেন বয়কট করা দরকার

৭১ টিভি বয়কটের যে ট্রেন্ড চালু হয়েছিল ফেসবুকে, তাকে আপনি ট্রেন্ড না বলে প্রয়োজন বলুন। অনেকেই দিকবিদিকশুন্য হয়েই কিছু শায়েখদের আহবানে ৭১ টিভিকে বয়কট করেছিলেন বা এখনও করছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই জানেন না এর পিছনে আসল কারণ অর্থাৎ ৭১ টিভি আসলে কেন বয়কট করাটা দরকার। তাহলে চলুন দেখি আসি কারণসমূহ।


মাস-কয়েক আগে কুয়েটের ছাত্ররা তাদের শিক্ষাবর্ষের শেষ দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখতে পাগড়ি আর জুব্বা গায়ে দিয়ে ক্যাম্পাসে ফটোসেশান করলে সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়। সেবার ৭১ টিভির এক মহিলা সাংবাদিক, গায়ে শার্ট আর জিন্স পরে ওই ছেলেগুলোকে প্রশ্ন করেছিলো যে, 'আপনারা বাঙালি পোশাক ছেড়ে আরবের পোশাক পরিধান করত গেলেন কেনো?' মহিলা নিজে গায়ে দিয়েছে শার্ট আর জিন্স। নিজের গায়ে পশ্চিমা আবরণ জড়িয়ে, মহিলা অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন, কেনো তারা বাঙালি পোশাক না পরে আরবের পোশাক পরেছেন! মানে হলো— আপনি পৃথিবীর যে-কোন দেশ, যে-কোন সংস্কৃতির পোশাক গায়ে তুলেন তাতে ৭১ টিভির কোন সমস্যা নেই, কিন্তু আপনি কোনোভাবেই আরবের পোশাক গায়ে তুলতে পারবেন না। 

খ) করোনা ভাইরাসের সময়ে ৭১ টিভি একটা টকশো তে করোনাক্রান্ত মানুষগুলোর মৃতদেহ দাফন না করে পুঁড়িয়ে ফেলবার দাবি তুলেছিলো। এতে নাকি ভাইরাস ছড়াবার আশঙ্কা কমে যায়। যেখানে WHO থেকে শুরু করে তাবৎ চিকিৎসাবিদ্যার সবাই একমত যে— মারা যাওয়ার ২-৩ ঘণ্টা পর মৃতদেহ থেকে আর ভাইরাস ছড়ায় না, সেখানে ৭১ টিভি আস্ত লাশকেই পুঁড়িয়ে ফেলবার মতলবে ব্যস্ত! এখানেও তাদের সুক্ষ্ম ইসলাম-বিদ্বেষ লুকায়িত।

গ) ২ জানুয়ারি ২০২০ এ "৭১ জার্নাল" নামক টক-শো এর উপস্থাপিকা মিথিলা ফারজানা, ইসলামে ইবাদতের স্থান মসজিদ সম্পর্কে মন্তব্য করেন “মসজিদ তো সবার আগে জমি দখলের প্রথম কাজ”। জ্বী হ্যাঁ, ইহা মসজিদপ্রেমী মুসলিমদের অন্তর ক্ষত করে দেওয়ার মতো একটি কথা।

ঘ) ২০১৬ সালের দিকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নিয়ে যখন প্রচন্ড মাতামাতি চলছিলো তখন ৭১ টিভি বিভিন্ন টকশো'র আয়োজন করে। সেই টকশোগুলোতে প্রত্যক্ষ্যভাবে ইসলাম যেন রাষ্ট্রধর্ম না থাকে সেই জন্য বিভিন্ন লোকদেরকে টকশোতে এনে ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাব প্রচন্ডভাবে প্রকাশ করতে থাকে ‘৭১ টিভি’। তার ধারাবাহিকতায় ২৬ শে মার্চ ২০১৬ তারিখে একটি টকশোতে অতিথি হিসেবে দাওয়াত দেওয়া হয় মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন-কে। উক্ত প্রোগ্রামে উপস্থাপিকা দ্বারা চরমভাবে অপদস্থ'র শিকার হোন সাখাওয়াত হোসেন।

ঙ) ওয়াজ মাহফিল কে কেন্দ্র করে বারবার রিপোর্ট প্রকাশিত হয় একাত্তর টিভির নিউজে। সেখানে দেশের নন্দিত আলেমদের ওয়াজের কথা কাট করে নিয়ে অশ্লীল হিসেবে উপস্থাপন করে ওয়াজ ও ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাবের পরিচয় দেয় ‘৭১ টিভি।’

এ বছরের মার্চ মাসে ওয়াজ মাহফিল নিয়ে একটি রিপোর্ট করে ৭১ টিভি। উক্ত রিপোর্টে বিখ্যাত আলেমদের কথাকে কুরুচিপূর্ণ, ভিন্ন ধর্মে আঘাতকারী, প্রতিবেশী দেশ বিরোধী হিসেবে প্রকাশ করা হয়। ভারত বিরোধী কথা বলায় আলেমদের ধুয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় উক্ত রিপোর্টে। এমনকি সেখানে বলা হয় যে, “ওয়াজের কারণে ধর্ষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।” ওয়াজ মাহফিল বিরোধী মনোভাব পোষণ করা একাত্তর টিভির বহু আগের স্বভাব। এখন পর্যন্ত প্রায় দশটির মতো ওয়াজ বিদ্বেষী রিপোর্ট করে একাত্তর টিভি। হ্যা, হয়তো বিভিন্ন ওয়াজে কিছু বক্তা কিছু কথা বলেছেন যা ভিত্তিহীন কিন্তু শুধুমাত্র সেই বক্তাদের সেই কথাগুলোকেই ফোকাস করে নিউজ বানানো কতটুকু যৌক্তিক?

৭১ মানে আবেগ, ৭১ মানে বাংলাদেশী স্বাধীনতার চেতনা। এই ৭১ টিভির সাথে ৭১ এর স্বাধীনতার চেতনা গুলিয়ে ফেলবেন না। যেখানে ৭১ এর স্বাধীনতা আমাদের সকল কাজ স্বাধীনভাবে করার অনুমোদন দিয়েছিল, ঠিক উল্টোভাবে এই ৭১টিভি ইসলামপ্রিয় জনতার ইসলাম পালনের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা করে চলেছে। ৭১ টিভির এহেন কর্মকান্ডের জন্য তাদের বিরুদ্ধে ওঠা জনমতকে সমর্থন করা এখন প্রাণের দাবী । ধর্ম-অন্তপ্রাণ মানুষ মাত্রেরই উচিত বিরুদ্ধবাদীদের এড়িয়ে চলা।