15 May 2020

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনঃ হুমকিতে বাক স্বাধীনতা


সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার বিজ্ঞাপন জারী করে জানিয়ে দিয়েছে - গুরুত্বপূর্ণ কোন ব্যক্তির সমালোচনা করে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে কিছু লিখলে তাকে শাস্তি পেতে হবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে - যদিও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কোন সংজ্ঞা সেখানে দেওয়া হয়নি। 

অবশ্য এ ক্ষেত্রে সরকারের কথার সাথে কাজের দারুন মিল। দৈনিক প্রথম আলোর ১১ মে, ২০২০ ইং তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে-মার্চ থেকে ১০ই মে পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে ৪৩ টি। ২০১৯ ইং সালে মামলার সংখ্যা ছিল ৬৩ টি । এসব মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ১২ জন সাংবাদিক। তাছাড়া অভিযুক্ত কার্টুনিস্ট, ব্লগার, ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কর্মীরাও জেলে।

উপরোক্ত মামলাগুলোর মধ্যে ১১টি হয়েছে করোনা ভাইরাস নিয়ে গুজব ছড়ানো, ৬টি হয়েছে মন্ত্রী, সাংসদ ও স্থানীয় মেয়রকে নিয়ে “মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন” বা ফেস বুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে । এসব মামলার অধিকাংশেরই বাদী আবার সরকারী দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।

অর্থাৎ দেশের এ অবস্থায় আপনার কোন মতামত বা বক্তব্য আপনি ফেসবুকে লিখবেন-তা যদি কোন না কোন ভাবে কর্তৃপক্ষের কোন কাজের সমালোচনামূলক হয়-কিংবা তাদের তা মনে হয়-তাহলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খড়গ নেমে আসবে আপনার উপর।

বার্তা হল-যত দুর্নীতি-অনিয়ম হউক না কেন-আপনি শুধু দেখবেন, শুনবেন-কিন্তু কিছু বলতে বা লিখতে পারবেন না। তাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ক্ষতি হবে। শাবাশ বাংলাদেশ ! শাবাশ গণতন্ত্র ! এহেন বাংলাদেশের জন্যই আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম ??

অথচ, বলাই বাহুল্য, সংবিধান হল আমাদের দেশের সর্বোচ্চ আইন। আমাদের সংবিধানের ১১ টি ভাগ বা অধ্যায় আছে এবং মোট ১৫৩ টি অনুচ্ছেদ আছে। আমাদের সংবিধানের ৭ নং অনুচ্ছেদে আছে-৭৷ 

(১) প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে৷
(২) জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসমঞ্জস হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে।

অতএব, জনগণের মৌলিক অধিকার হরণকারী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করুণ-বিশ্ব মানবাধিকার ঘোষণা মেনে চলুন। এ মহামারীর মহা দুর্যোগকালে প্রতিবাদী বা বিবেকবান মানুষদের উপর রাষ্ট্রীয় নিপিীড়ন ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ- যার জন্য আপনাদের ইতিহাসের কাঠগড়ায় একদিন দাঁড়াতে হবে।