09 January 2016

মাহমুদুর রহমানঃ সাহসের বাতিঘর

মাহমুদুর রহমান জেলে আছেন জানি কিন্তু কোন বিচার হচ্ছে কিনা জানিনা! মাহমুদুর রহমান কতবড় মামলার আসামী যে ১০০০ দিন পার হয়ে গেল এখন পর্যন্ত বিচার বা জামিন কোনটাই হলোনা। বর্তমান বাংলাদেশে যতজন সম্পাদক আছেন মাহমুদুর রহমান তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ তা নিশ্চিন্তে বলা যায়। মাহমুদুর রহমান যেভাবে স্রোতের প্রতিকুলে সত্য প্রকাশ করেছেন তা বর্তমান বাংলাদেশের কোন মিডিয়াই পারছেনা। যার মাসুল দিচ্ছে আমার দেশ পত্রিকা ও তার বেকার কর্মচারীবৃন্দ। কে রাখে তাদের খবর? কি আশ্চর্য একটা দেশ!


দেশের জনগণ ভাল করেই জানেন, সমাজের প্রতি গণমাধ্যমের যে দায়বদ্ধতা সেটাই আমার দেশ পালন করছিল। আমার দেশ কালোকে কালো এবং সাদাকে সাদা বলতে ভয় করেনি। শেখ হাসিনার সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট, গণতন্ত্র ধ্বংস, মানবাধিকার লঙ্ঘন, খুন-গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যা, সীমান্ত বিএসএফ-এর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ অত্যন্ত বস্তুনিষ্ঠভাবে আমার দেশ তুলে ধরেছে। অনুসন্ধানী রিপোর্টে প্রতিদিনই ঠাসা থাকত পত্রিকাটি। বিচারপতির স্কাইপ কেলেঙ্কারি ফাঁস করে দিয়ে সম্পাদক মাহমুদুর রহমান হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন। এই রিপোর্টের জন্য তিনি পুরষ্কৃত হওয়ার কথা। এটা ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারি ফাঁস করার মতই একটি অসাধারণ রিপোর্ট ছিল। কিন্তু পুরষ্কারের বদলে তার ভাগ্যে জুটেছে নির্মম জেল নির্যাতন। এর আগেও প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের একটি বস্তুনিষ্ঠ খবর ছাপার জন্য তাকে ১০ মাস জেলে থাকতে হয়েছে।

আমার দেশ-এর রিপোর্ট, সম্পাদকের মন্তব্য প্রতিবেদন, সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয়ের গ্রহণযোগ্যতার কারণেই পত্রিকাটি দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সার্কুলেশনের কাগজ হিসেবে পাঠকপ্রিয়তা লাভ করে। এ পত্রিকার লেখালেখির কারণে তখন অন্যান্য পত্রিকাকেও অনেক নিউজ ‘বø্যাকআউট’ করতে চিন্তা করতে হত। আজ আমার দেশ বন্ধ। গণমাধ্যমের বর্তমান অবস্থা কী তা সবার কাছেই পরিষ্কার। পাঠকরা নিজেরাই তুলনা করতে পারছেন। আমরা আশাবাদী সেদিন বেশি দূরে নয়, দেশের জনগণ আবারও আমার দেশ পড়তে পারবে এবং সম্পাদক মাহমুদুর রহমান তাদের মাঝে ফিরে এসে তার সৃজনশীলতা দিয়ে সমাজ আলোকিত করবেন।

আমার দেশ এবং তার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের অপরাধ কী? অপরাধ হলো সাহস করে সত্য লেখা এবং সত্য কথা বলা। আর এটাই কাল হয়ে দাঁড়ায়। ১০০০ দিন হলো আমার দেশ বন্ধ এবং সম্পাদক মাহমুদুর রহমান অন্ধকার কারাগারে নির্যাতন সহ্য করছেন। এ সময়ে তাকে ১৯দিন রিমান্ডের যন্ত্রণাও ভোগ করতে হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে ৭০টি মামলা। এসব মামলার হাজিরা দিতে তাকে সপ্তাহে দু’তিন দিন কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকার আদালতে আনা নেয়া করা হয়। যানজট ও গরমের দুঃসহ যন্ত্রণা এ সময় তাকে নিরবে সহ্য করতে হয়। শুধু মাহমুদুর রহমানই নয়, তার বৃদ্ধা মা এবং সহকর্মীদের বিরুদ্ধেও দেয়া হয়েছে মামলা।

পত্রিকা বন্ধ এবং সম্পাদক জেলে থাকায় আমার দেশ-এর পাঁচ শতাধিক সাংবাদিক কর্মচারি বেকার হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে নিদারুন দুঃখকষ্ঠে দিনাতিপাত করছেন। আমার দেশ পত্রিকার প্রেস খুলে দেয়ার জন্য সাংবাদিক-কর্মচারিরা প্রধানমন্ত্রীর অফিস, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী এবং ঢাকার ডিসির বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছেন। পত্রিকা খুলে দেয়া ও সম্পাদকের মুক্তির দাবিতে আমার দেশ পরিবার, বিএফইউজে, ডিইউজে এবং পেশাজীবি সংগঠনগুলোর উদ্যোগে অসংখ্য সভা-সমাবেশ করা হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই সরকারের টনক নড়েনি। আমরা হাইকোর্টে আমার দেশ খুলে দেয়ার জন্য রিট করেছি। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে এটর্নী জেনারেল অফিসের হস্তক্ষেপের কারণে আজ তিন বছর হলো হাইকোর্টে মামলাটির গ্রহণযোগ্যতার শুনানী পর্যন্ত হয়নি। এরই মধ্যে কারওয়ান বাজারে আমার দেশ-এর কার্যালয়টি রহস্যজনক আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এতে পত্রিকার যাবতীয় সম্পদ বিশেষ করে ১১ বছরের সব রেফারেন্স, তথ্য-উপাত্ত, প্রধান সার্ভারের ডাটাব্যাংক সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।

মাহমুদুর রহমানের মত বীরে সাময়িকের জন্য কষ্টে থাকলেও বাংলাদেশের সাধারন মানুষের মনে তিনি চিরদিন একজন সম্মানিত বীর হিসাবেই থাকবেন। সালাম জানাই বীর সাংবাদিক জনাব মাহমুদুর রহমানকে যিনি দেশের জন্য ধুকে ধুকে প্রান বিসর্জন দিচ্ছেন!