একটা মা, সে তাঁর সন্তানের সাথে খেলছে, এ নিয়ে ফেসবুকীয় জনতার হাউকাউয়ের কি ঘটেছে বুঝলাম না। বিশেষ করে "নারীবাদী" দাবিকারী, যারা নাকি নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জানপ্রাণ দিয়ে দিচ্ছেন, তাঁদের কাউকে কাউকে অতি নোংরা ভাষায় এই ছবির বিরোধিতা করতে দেখছি।
বোরখায় সমস্যাটা ঠিক কোথায় একটু বুঝিয়ে বলবেন কি? ইসলামিক পোশাক বলেই সমস্যা? তাহলে তাদের সমস্যাটা নারীর স্বাধীনতায় নয়, তাঁর ধর্মচর্চায়। দুইটাকে এক করে নিজেরাই বিভ্রান্ত হয়ে গেছেন।
এক নারী কি পোশাক পরবে, তাঁর নিজের শরীরের কোন অংশ ঢাকবে কোনটা উন্মুক্ত রাখবে সেটা নির্ধারণ করে দিবে কতিপয় "নারীবাদী" মহিলা? মাস শেষে এই বোরখা পরিহিতা মহিলার কয়টা বিল (গ্যাস, বিদ্যুৎ, বাড়িভাড়া ইত্যাদি) এরা পরিশোধ করে একটু বলতে পারবেন? তাহলে মানুষের ব্যক্তিগত ব্যাপারে এত নাক গলানো কেন?
বোরখা সৌদি/পাকিস্তানী/আফগানী পোশাক বলেই আপত্তি? যদি তাই হয় তাহলে শার্ট প্যান্টে যখন মেয়েরা খেলে তখন এই একই মানুষেরা আপত্তি করেন? শার্ট প্যান্টওতো বাঙালি পোশাক না। ওটা ইংরেজদের পোশাক যারা প্রায় দুইশ বছর আমাদের লুটপাট করেছে। বাঙালি পোশাক দাবি করলে কেবলই শাড়ি পরে খেলতে হবে তাহলে। স্যালোয়ার কামিজও যতদূর জানি "বিদেশী" পোশাক।
ওয়েট! তাহলেতো ক্রিকেটও খেলতে পারবে না। সেটা ইংরেজদের আবিষ্কার। দেশি খেলা কি আছে? কাবাডি! আর কিছু? একটা মা তাহলে শাড়ি পরিহিতাবস্থায় নিজের ছেলের সাথে কাবাডি খেললেই ইনাদের কলিজা শীতল হবে?
এত চেতনা! এত চেতনা! আহা!
স্বাধীন বাংলাদেশ কি তাঁর নাগরিকদের যার যার ধর্ম চর্চার পাশাপাশি যার যার রুচি অনুযায়ী পোশাক পরার অধিকার নিশ্চিত করে না? বোরখা পরলেও এদেশিদের গাত্রদাহ হয়, শাড়ি পরলেও আরেকদলের গাত্রদাহ হয়। এদেশের মেয়েরা করবেটা কি? মরে যাবে?
যারা পোশাক বা মাদক সেবনকে নারীর অধিকারের সাথে মিলিয়ে মিশিয়ে এক করে ফেলেন, তারা ভন্ড। মূলত বিভ্রান্তি ছড়ানো ছাড়া কোন কাজের কাজটা করে না। নিজের ভাল মন্দ বুঝতে পাড়ার ক্ষমতাও নারীবাদের অংশ। এবং প্রথম ধাপ হচ্ছে, এদের থেকে সাবধান হওয়া ও এদের পরিত্যাগ করা।