01 August 2016

জঙ্গিবাদের রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষন

জঙ্গিবাদ এখন একক কোন দেশের সমস্য নয়, এটি এখন বৈশ্বিক সমস্যায় রূপ নিয়েছে। ফ্রান্সের প্যারিস, নিস, বাংলাদেশের ঢাকা কিংবা জার্মানির মিউনিখ নগরীতে হামলার ধরনে কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও সব ক’টি হামলার উদ্দেশ্য এবং টার্গেট কিন্তু একই। নিরীহ নিরপরাধ মানুষ হত্যা করে জনমনে ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারকে বেকায়দায় ফেলাই এসব হামলার উদ্দেশ্য।

প্রসঙ্গত, মিউনিখের হামলাকারী তরুণের বয়স ছিল মাত্র আঠারো। যে বয়সে জীবন নিয়ে নানান রঙ্গিন স্বপ্ন বোনা ও রোমাঞ্চের পেছনে ছোটার কথা। সেই বয়সেই ইরানী বংশোদ্ভুত আলী ডেভিড সনবোলি কোন না কোনভাবে জঙ্গিবাদ দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে অথবা প্ররোচিত হয়েছে। এটা স্বল্পতম সময়ে ঘটেনি। বছরের পর বছর ধরে হয়ত তার ব্রেন ওয়াশ করা হয়েছে। এরপরই হয়ত গত ২২ জুলাই সন্ধ্যায় মিউনিখের এক বিপনী বিতানে বন্দুক হাতে একাই নিরীহ মানুষ হত্যার মত জগন্য খেলায় মেতে উঠ। এসময় ৯ জন ঘটনাস্থলেই নিহত এবং আরও ২৭ জন গুরুতর আহত হন। এটা নিঃসন্দেহে এক বিকৃত মস্তিষ্কের কাজ।

গত ১৪ জুলাই রাতে ফ্রান্সের নিস নগরীতে হামলাকারী তিউনিসিয়ার বংশোদ্ভুত ফরাসী নাগরিক মোহাম্মদও হয়ত একই ধরনের ব্রেন ওয়াশের শিকার হয়েছিল। বিবিসি, রয়টার্সসহ আন্তর্জাতিক মিডিয়ার প্রতিবেদন দেখে মনে হয়েছে সে-ও জঙ্গি ফোবিয়ায় বিকারগ্রস্ত ছিল। নতুবা বস্তিল দিবসে জড়ো হওয়া হাজারো মানুষের উপর ট্রাক তুলে ৮৪জনকে হত্যা এবং আরও শতাধিক মানুষকে আহত করার মত জঘন্য ঘটনা ঘটানোর চিন্তা কোনভাবে করাও সম্ভব হত না।

১ জুলাই সন্ধ্যায় ঢাকার গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে ৬ তরুণ অস্ত্র হাতে ঢুকে পড়ে ১৮ বিদেশীসহ ২২ জনকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম হলেও সেখানেও কাজ করেছে বিকৃত মানসিকতা। এটা এক দিনের প্রস্তুতিতে তারা যে করেনি, সে কথা সবারই জানা। দীর্ঘদিন ধরে এসব তরুণদের কেউ না কেউ মগজ ধোলাই করেছে। যারা পবিত্র ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তরুণদের বিপথগামী এবং পৃষ্ঠপোষকতা করছে তাদেরই আগে খুঁজে বের করতে হবে। নতুবা ঢাকার কল্যাণপুরে আইন-শৃংখলা বাহিনীর অভিযানে ৯ তরুণ নিহত হওয়ার মতো আরও অনেক ঘটনা-অভিযান চলবে। হয়ত জঙ্গি ভাবাদর্শের তরুণের সাথে নিরীহ কিছু মানুষের প্রাণহানি ঘটবে। পুলিশের ব্লক রেইডের নামে সাধারণ মানুষের হয়রানি-ভোগান্তি চলতে থাকবে। কিন্তু জঙ্গি হামলার আশংকা থেকে মুক্ত হওয়া যাবে না।

ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম, তুরস্ক কিংবা বাংলাদেশ যেখানেই এসব সন্ত্রাসী হামলা ঘটুক না কেন প্রাণ হারাচ্ছেন নিরীহ সাধারণ মানুষ। জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এসব হত্যাকান্ডের পর আমাদের মত সাধারণ মানুষের মন কেঁদে উঠে। তাদের শোকাহত স্বজনদের মর্মবেদনায় আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। আর অজানা আশংকায় ভীত সন্ত্রস্ত্র হই এই ভেবে যে, কোন দিন আমরা নিজেরাই না এই সন্ত্রাসের শিকার হই। দেশে দেশে জঙ্গিবাদের কালো থাবার বিস্তৃতি রোধে তাই এসব ঘটনার রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন। একই সাথে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সমন্বিত কর্ম কৌশল গ্রহণ করাও সময়ের দাবি।