08 September 2012

১৯৭১ সালে সুফিয়া কামালের ভূমিকা কি ছিল?

উইকিপিডিয়াতে বলা হয়েছে এভাবে, ১৯৭১ সালের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের মিছিলে নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধের তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা দেন। অর্থাৎ তিনি নাকি বাসায় থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগীতা করেছেন। এখানেই রয়েছে আসল রহস্য।

আসলে কিভাবে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগীতা করেছেন?
১৯৭১ সালে পূর্বপাকিস্তানের সবচেয়ে অভিজাত এলাকা ধানমন্ডি। সেখানে সার্বক্ষণিক সেনা প্রহরা থাকত। কঠিন ভাবে সেনাপ্রহরা থাকার কারণে যুদ্ধের ছোঁয়া বলতে গেলে সেখানে লাগেনি। মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে আসার দুঃসাহস করতেন না। সরকারী কর্মকর্তা বা যাদের ব্যাপারে সেনাবাহিনী নিশ্চিত ছিল যে তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোন কাজ করে না, শুধুমাত্র তারাই সেখানে বাস করতেন। সেই ধরনের একটি এলাকায় সুফিয়া কামাল যুদ্ধের পুরো সময়েই ছিলেন। এখন কিভাবে তিনি সেই পরিবেশে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগীতা করেছেন?

এবার সুফিয়া কামালের নিজের ভাষায় দেখুন তিনি কোন পরিবেশে ছিলেন?
সুফিয়া কামাল একাত্তরের ডায়েরি নামে দিনলিপি লিখেছেন। সেখানে তিনি নিজের বাসস্থান সম্পর্কে বলেছেন এভাবে, মুক্তিযুদ্ধের নয়টি মাস আমি বারান্দায় বসে বসে দেখেছি পাকিস্তানী মিলিটারীর পদচারণা। আমার পাশের বাসায় ছিল পাকিস্তানী মিলিটারীর ঘাঁটি। ওখানে দূরবীন চোখে পাকবাহিনীর লোক বসে থাকতো। রাস্তার মোড়ে, উল্টো দিকের বাসায় সবখানে ওদের পাহারা ছিল।’
অর্থাৎ পাকিস্তান আর্মির অন্যতম প্রধান ঘাঁটির পাশের বাসায় সুফিয়া কামাল থাকতেন এবং বারান্দায় বসে বসে তাদের কাজকর্মের সৌন্দর্য অবলোকন করতেন। এখন চিন্তা করুন, পাকিস্তান আর্মির পাশেই তাদের সবচেয়ে নিরাপত্তায় অবস্থান করা সুফিয়া কামালের পক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগীতা করা সম্ভব? মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে সুফিয়া কামালের সাথে দেখা করে সহযোগীতা নেয়া কি সম্ভব ছিল?
তাহলে তিনি কিভাবে সহযোগীতা করেছেন? তার দিনলিপিতেই দেখুন- যুদ্ধের শেষের দিকে ভয়াবহতম দিনগুলোতেই তিনি কোন হালে ছিলেন তা দেখুন।

৪ নভেম্বর, ১৯৭১ বৃহস্পতিবার-
আজ দুলুর ফোন পেলাম। ওরা ভালো আছে। আল্লাহর কাছে শোকর।...
হয়তো সুফিয়া কামালের ছেলে হবে। ছেলে ফোন করে এবং ভাল আছে। যুদ্ধে সহযোগীতা কোথায়?

৭ নভেম্বর ১৯৭১ রবিবার-
গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় ও আজ সন্ধ্যা ৬টার সোভিয়েত বিপ্লব দিবস উৎসব উপলক্ষে ১২ নং রাস্তা ও গুলশানের রিসেপশন সমাবেশে যোগদানের জন্য গেলাম। অনেকের সাথে দেখা হলো।
সেই উত্তাল ও ভয়ংকর দিনগুলোতে তিনি ধানমন্ডির বাসা থেকে গিয়ে আরেক অভিজাত এলাকায় আনন্দ অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। সেখানে অনেকের সাথে দেখা হয়। আহারে কত বড় সহযোগীতা!

৮ নভেম্বর ১৯৭১ সোমবার-
আজ হেনা এল...। লন্ডন থেকে বুড়নের চিঠিতে জানলাম, ওরা তিন বোন রেনু খালার বাড়ী বেড়িয়ে এল এক সপ্তাহের ছুটিতে। আল্লাহ ওদেরে শরীর স্বাস্থ্য রুজী হায়াত ইজ্জত রক্ষা করুন এই দোয়া করি।
সুফিয়া কামালের আত্মীয়দের (নাকি নাতি-নাতনি?) অবস্থা দেখুন। সেই কঠিন সময়ে লন্ডন থেকে পূর্বপাকিস্তানে আসে বেড়ানোর জন্য। ভাল ভাল। কারণ তারা নিশ্চয় জানে পাকিস্তান আর্মি তাদের কোন ক্ষতি করবে না! করবেই বা কেন? তারা কি পাকিস্তান ভাঙ্গার পক্ষে নাকি? হা হা হা!

২৭ নভেম্বর ১৯৭১ শনিবার-
আজ ১-১০-এর প্লেন এ চাটগাঁ থেকে ফিরে এলাম। ১৮ তারিখে চাটগাঁ গিয়েছিলাম।
আলীশান কাজ কারবার। সেই কঠিন, কারফিউ ও গুলাগুলি ভরা দিনগুলোতে সুফিয়া কামাল পাকিস্তানী বিমানে ভ্রমণ করেন। চট্টগ্রামে গিয়ে প্রায় দশ দিন থেকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসেন। মুক্তিযোদ্ধাদের একজন সহযোগী এভাবে নির্বিঘ্নে ভ্রমন করতে পারে?

সুফিয়া কামালের ভূমিকা কি স্বাধীনতার পক্ষে ছিল?
যতটুকু জানা যায় পাকিস্তান ও আইয়ুবের প্রশংসা করে কবিতা লিখেছেন সুফিয়া কামাল। অনেক বুদ্ধিজীবির সাথে মিলে তিনিও পাকিস্তানের পক্ষে ১৯৭১ সালে বিবৃতি দিয়েছিলেন। এরপর সে সময় তার আলীশান জীবন যাপনের কথা তো নিজেই বলেছেন। যদিও দিনলিপিতে উৎকন্ঠার কিছু বর্ণনাও আছে। তবে তা কোন ভাবেই দেশ ও মানুষের জন্য নয়। বরং যুদ্ধবিপন্ন একটি দেশে স্নেহময়ী একজন মা যেভাবে সন্তানদের জন্য উৎকন্ঠায় থাকেন, ঠিক তেমন। দেশে বিদেশে তার সন্তানরা নিরাপত্তায় থাকার পরও কোন বিপদ হয়ে যায় কিনা সেটিই ছিল তার উৎকন্ঠার কারণ। তাহলে এর নাম কি মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগীতা করা?

সুলতানা কামালের ভূমিকা কি ছিল?
সুলতানা কামালের বয়স সে সময় ৩০ বা তার ছেয়ে বেশি ছিল। দিনলিপিতে মা সুফিয়া কামাল অনেক গুলো ডাক নাম ব্যবহার করেছেন। তারা কেউ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। যতটুকু বুঝা যায় সুলতানা কামালও তার চক্রবর্তী স্বামীকে নিয়ে সুখেই ছিলেন। যুদ্ধ তাদের জীবন যাপনে কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারেনি। মায়ের পরিচয়ে শান্তিতেই ছিলেন।