15 September 2015

দেশীয় পঁচা ডিমের রাজনীতি প্রবাসে কেন?

ডিম কেন পঁচে বা পঁচা ডিমের গন্ধ কত প্রকার ও কি কি সেই সাথে পঁচা ডিমের উপকারিতা কেমন সেটা নিয়ে গবেষণার সময় অন্ততঃ দূর প্রবাসে আপনার-আমার কারোই নেই, এটা যেমন সহজ সত্য, তার চাইতে কঠিন সত্য হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে দেশীয় স্টাইলে পঁচা ডিমের রাজনীতি চর্চা করে সভ্য দেশের বায়ু দূষিত করার প্রয়োজন কতটুকু, সেটা নিয়ে অবশ্যই ভাবনার অবকাশ রয়েছে। বিদেশে নাকি এক একজন প্রবাসী বাংলাদেশী এক একজন অ্যাম্বাসেডর, তাই যদি হবে তবে পঁচা ডিম আর পুরনো জুতার প্রকাশ্য নোংরা ব্যবহারে দেশের ভাবমূর্তি কোথায় গিয়ে ঠেকছে সেটাও পরিমাপের সময় এসেছে আজ।

নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় প্রটেস্ট-প্রতিবাদ অভিযোগ-সমাবেশ না করে অসভ্য-ইতর-বর্বর স্টাইলে পঁচা ডিম নিক্ষেপ, ব্যবহৃত কমদামী ছেড়া জুতা ছুড়ে মারা বা নির্ধারিত এরিয়ার বাইরে গিয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত উচ্চস্বরে জন্তু-জানোয়ারের মতো চিৎকার-চেঁচামেচি করা এমনকি বাংলার গ্রামে-গঞ্জের চর দখলের রীতিতে উন্নত দেশের হোটেলের সামনে অবরোধের নামে অবস্থান নিয়ে লোকাল মিডিয়ায় ফটো এন্ড ভিডিও সেশনের পাশাপাশি দাঁত কেলিয়ে হাসা অবশ্যই গনতন্ত্রের পরিভাষা নয়। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি’র অতি উৎসাহী নেতা-কর্মীরা গত বেশ কয়েক বছর ধরেই বিশ্বের নানা প্রান্তে বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকায় চর্চা করছেন ঠিক ঐ পঁচা ডিমের নোংরা রাজনীতি।

প্রথমতঃ বিশ্বের যে কোন দেশেই বাংলাদেশ ভিত্তিক রাজনীতি চর্চা সংশ্লিষ্ট দেশের আইনে শতভাগ অবৈধ। তবে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে যেহেতু সম্মান জানায় ইউরোপ-আমেরিকার উন্নত দেশগুলো, তাই এখানকার বিভিন্ন দেশে বসবাসরত অভিবাসী নাগরিকরা তাদের অরিজিন দেশের কোন অনিয়ম-অত্যাচার বা অগনতান্ত্রিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় প্রতিবাদ জানাবার নিমিত্তে আয়োজিত সমাবেশের অনুমতি পেয়ে থাকেন। অনুমতি দিতেও কুন্ঠিত নয় স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু এই অনুমতিটি পাবার পর সুযোগের অপব্যবহার করতে ‘যার পর নাই’ পারদর্শীতার পরিচয় দিয়ে আসছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত পঁচা ডিম নির্ভর এক শ্রেণীর সো-কল্ড নেতা-কর্মী। দেশে থাকাকালীণ রাজনীতির মাঠে পদচিহ্ন না পড়লেও প্রবাসে ভিলেজ পলিটিক্স চর্চায় তাদের অনেকেই আজ এমফিল-পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন বা করার পথে রয়েছেন।

ভিলেজ পলিটিক্সে এমফিল-পিএইচডি বা সমমানের কোর্স শেষ করতে গিয়ে দূর প্রবাসে এই বেকুবরা এতোটাই আত্মঘাতী যে, দেশের মান-সম্মান রক্ষা করার চাইতে পঁচা ডিমের দুর্গন্ধ ছড়াতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ অনুভব করছেন প্যারিস-লন্ডন-নিউইয়র্ক সহ সর্বত্র। লন্ডন-নিউইয়র্কে যারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িতে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে ডিম-জুতা নিক্ষেপ করেছেন অতীতে বা আসছে দিনগুলোতেও একই পরিকল্পনা যাদের মাথার গোবরের সাথে সহবাস করছে, তাদের এই বাড়াবাড়ি স্বার্থক হতো যদি ব্রিটিশ-ইউএস সরকার বাংলাদেশের সরকার প্রধানকে ‘ওয়েলকাম’ না জানাতো। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার অনুমতি অবশ্যই আপনাকে দিয়েছে, কিন্তু জন্তু-জানোয়ারের মতো চিৎকার-চেঁচামেচি বা লিমিট ক্রস করে ডিম-জুতা নিক্ষেপের স্বাধীনতা অবশ্যই আপনাকে দেয়া হয়নি।

পঁচা ডিমের দুর্গন্ধময় রাজনীতি থেকে মুক্ত নয় বিভিন্ন দেশের বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত সরকার দলীয় অতি উৎসাহী ভিলেজ পলিটিশিয়ান নেতা-কর্মীরাও। একাধিকবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসার প্রয়োজনে বা তাঁর ছেলের সাথে ঈদ করতে লন্ডন আসছেন, তাই বলে তাঁকে প্রতিহত করতে হবে কেন? তিনি যদি সন্ত্রাসের গডমাদারই হবেন, তবে ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশন তাঁকে ভিসা ইস্যু করলো কেন? বিলেতে খালেদা জিয়ার পেছনে না দৌড়ে বরং ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচী পালন করতে পারেন পঁচা ডিম মার্কা রাজনীতিবিদরা যারা তাঁকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সময় হলে হয়তো লেবুর শরবত নিয়ে আপনাদের অনশন ভাঙাতে আসলেও আসতে পারেন! নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় লিমিট ক্রস না করে প্রতিবাদ জানালে ক্ষতি কি?