ছাত্রলীগ বেপরোয়া, কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না

আর কত? ছাত্রলীগকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কারো নিয়ন্ত্রণই যেন মানতে চাইছে না ছাত্রলীগ। কারো পরোয়া করছে না তারা। ছাত্রলীগের ইচ্ছা-অনিচ্ছাই যেন নিয়মে পরিণত হতে চলেছে সবখানে। টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে এমন কোনো অপকর্ম নেই, যেখানে ছাত্রলীগ নেই। কিছুদিন আগে প্রায় সব জাতীয় পত্রিকায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগের অপকীর্তির খবর বেরিয়েছে।

একসময় ছাত্ররাজনীতিতে আসত মেধাবী ছাত্ররা। ছাত্ররাজনীতির সেই সোনালি দিন এখন আর নেই। এখন ছাত্ররাজনীতিতে যাদের দেখতে পাওয়া যায়, তাদের অনেকেই অছাত্র। প্রধানমন্ত্রী নিজেও কোনো এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, তিনি ছাত্রলীগে 'আদু ভাইদের' দেখতে চান না। কিন্তু এই আদু ভাই এবং ছাত্র নামধারীরাই আজ আমাদের দেশের ছাত্ররাজনীতিতে জেঁকে বসে আছে। এদের আধিপত্য রক্ষায় অনেক ছাত্রের ছাত্রজীবন চলে যাচ্ছে। ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে সিট পাওয়া যায় না। অপরাজনীতির ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হচ্ছে ছাত্রদের। তাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে অস্ত্র। নগদ টাকার প্রলোভন ত্যাগ করা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। নগদ প্রাপ্তির লোভেই অনেক ছাত্র জড়িয়ে যাচ্ছে টেন্ডারবাজিতে।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ হাসিনাও একসময় ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। "সন্ত্রাসী যে দলেরই হোক না কেন, প্রতিরোধ করা হবে," এমন বলেছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানও যেন অগ্রাহ্য করা হয়েছে। বিশেষ করে ছাত্রলীগ যখন সরাসরি সন্ত্রাস ও দখলদারিত্বের অপরাজনীতির সঙ্গে জড়িত হয়ে যায়, তখন তো বলতেই হয়, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান অগ্রাহ্য করেছে তারা। হ্যাঁ, ছাত্রলীগে ভেজাল ঢুকে গেছে, এ কথা হয়তো সত্য। নিজেদের রক্ষা করতে অনেকেই ছাত্রলীগে নাম লেখাতে পারে। কিন্তু এই ছাত্রলীগ যারা নিয়ন্ত্রণ করেন, তাঁদের এখানে ভূমিকাটা কী? নাকি তাঁরাই ব্যবহার করছেন ছাত্রলীগকে?

আমাদের দেশের রাজনীতিতে পেশিশক্তির ব্যবহার নতুন কিছু নয়। পেশিশক্তি বারবারই দেশের রাজনীতিকে কলুষিত করেছে। পূর্বে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নামে যেসব অপকর্ম হয়েছে, সে পথেই যদি ছাত্রলীগ-যুবলীগ যায়, বেছে নেয় সন্ত্রাসের পথ, তাহলে মানুষের দাঁড়ানোর জায়গাটি আর কোথায় থাকে? অবিলম্বে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নামে সব সন্ত্রাস বন্ধ করা হোক। শক্ত হাতে দমন করা হোক ছাত্র নামধারী এ দুর্বৃৃত্তদের। সরকারের এক বছর পেরিয়ে আরো চারটি মাস চলে গেছে। আর কত সহ্য করবে দেশের মানুষ? ছাত্ররাজনীতির নামে এ সন্ত্রাস আর কত?